ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামী হত্যার বিচার চান জেলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
স্বামী হত্যার বিচার চান জেলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

মুন্সিগঞ্জ: চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা নদীতে নৌ পুলিশের গুলিতে মাসুদ মালের (২২) নামে এক জেলের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন মৃত জেলের স্ত্রী কল্পনা বেগম।

প্রায় ৫ বছরের সুখের সংসারের সমাপ্তি ঘটেছে মাসুদ ও কল্পনার।

শেষ হয়ে গেছে জেলে পরিবারটির নতুন সন্তান আগমনের সব আনন্দ। মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন মুন্সিগঞ্জের সদরের আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রাম। এখানে জেলেদের একটি বড় অংশ বসবাস করে। মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ পরিবারের বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজনরা। কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস।  

এ ঘটনার বিচার দাবি করে মৃত জেলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা গরিব। মাছ শিকার আর মাটির কাজ করে আমার স্বামী সংসার চালাতেন। নৌকা আর বাড়িটিও ঋণের টাকায় করা। আমার ছয় মাসের সন্তান গর্ভে, আর দুই বছরের সন্তান আছে। সন্তান নিয়ে কোথায় যাব? ৫০০ টাকার প্রতিদিন চিকিৎসা খরচ লাগে। এই খরচ কে দেবে এখন? আমার স্বামীকে বিনা কারণে হত্যা করা হয়েছে, আমি সুষ্ঠু বিচার চাই, ফাঁসি চাই। ’ 

চর আব্দুল্লাহপুর নৌ-পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ফারুক হোসেন জানান, ট্রলারে বাবাসহ তিন ভাই ছিলেন। এর মধ্যে এক ভাই নিহত হয়েছেন। এক ভাই গ্রেফতার আছেন এবং আরেক ভাই ও তার বাবা পালিয়ে গেছেন।  

তিনি বলেন, ‘নিহত মাসুদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো তথ্য নেই। তিনি কখনো নৌ-পুলিশের হাতে আটকও হয়নি। নিবন্ধিত জেলে না হলেও তার পরিবার মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। পরিবারটি গরিব। ’ 

প্রত্যক্ষদর্শী নিহত মাসুদের বড় ভাই মাহফুজ হোসেন (২৭) বলেন, মাছ শিকার শেষে আস্তে আস্তে ট্রলারটি চালিয়ে ফিরছিলাম। ইঞ্জিনের তেল বাঁচানোর জন্য ধীরে ধীরে চলছিল ট্রলার। সেসময়ে পিছন দিক থেকে একটি নৌযানের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌ-ডাকাতের ভয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাওয়ার সময় পিছন দিয়ে গুলি ছোড়া হয়। তখন দুইটি গুলি শরীরের লাগে মাসুদের। এরপর ট্রলারটি থামিয়ে আমরা তিনজন পালিয়ে গেলেও ভাইসহ বাকি তিনজনকে আটক করা হয়। সেখানে নৌ-পুলিশ ট্রলারে এসে লাঠি দিয়ে বেধড়ক আঘাত করে। পরে জানতে পারি ভাই মারা গেছেন, আর বাকি দুইজনকে নৌ ডাকাত বলে আটক করা হয়েছে। নৌ-ডাকাত আখ্যায়িত করে গোলাগুলি করেছি, এমন মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে নৌ-পুলিশ।


মৃত জেলের স্ত্রী কল্পনা বেগম বলেন, রাত ১টার দিকে খবর আসে নৌ-পুলিশ ট্রলার আটক করেছে। আমাদের কাছে কোনো মোবাইল নেই। কতক্ষণ পর খবর এলো তিনজনকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর শুনি আমার স্বামীর শরীরে গুলি লাগায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটাও জানিনা ঢাকার কোন হাসপাতালে। পরে একজন নৌ-পুলিশ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের পরিচয় জেনে ফোন কেটে দেয়। এরপর যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ করে রাখে। পরে জানতে পারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমার স্বামী মারা গেছেন।

চাঁদপুরের নৌ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, জাটকা নিধন প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে একটি টহল দল রাতে নদীতে নামে। এ সময় মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে ৫ সদস্যের একদল জেলে নদীর জাটকা নিধন করছিলেন। পুলিশ ধাওয়া করলে বিপরীত দিক থেকে জেলেরা ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে মাসুদ নামের এক জেলে বাম পায়ের ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় মাসুদকে প্রথমে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থা খারাপ দেখে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়। সোমবার (১৫ মার্চ) দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  

এ ঘটনায় দুইজন আটক আছেন ও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।