ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রায়হান হত্যা

প্রস্তুতকৃত অভিযোগপত্রে আসামি পুলিশ-সাংবাদিক!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২১
প্রস্তুতকৃত অভিযোগপত্রে আসামি পুলিশ-সাংবাদিক!

সিলেট: সিলেটে পুলিশে হেফাজতে রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) এ সপ্তাহেই আদালতে দাখিল করা হবে। সোমবার (২৯ মার্চ) অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করার কথা ছিল।

কিন্তু আরো আংশিক কাজ বাকি থাকায় অভিযোগপত্র দাখিল পেছানো হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে সোমবার আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে, কিছু বিষয় যুক্ত করার জন্য অভিযোগপত্র দাখিলে বিলম্ব হবে। অবশ্য সপ্তাহের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল করবেন। এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগপত্রের বিষয়ে জানানো হবে।

সূত্র জানায়, রায়হান হত্যা মামলায় সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া, বন্দরবাজার ফাঁড়ির টুআইসি এসআই হাসান আলী, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেন ছাড়াও এজাহারনামীয়দের সবাইকেই চার্জশিটভুক্ত থাকছেন। এছাড়া মামলার এজাহার বহির্ভূত পলাতক সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানকেও চার্জশিটে অভিযুক্ত দেখানো হয়েছে।

সিলেট নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হান উদ্দিনকে ১০ অক্টোবর রাতে কোতোয়ালির বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ফাঁড়িতে রাতভর বেঁধে রেখে তাকে নির্যাতন করা হয়। গুরুতর অবস্থায় ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে রায়হানের মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যান এসআই রায়হান। এরপর ময়নাতদন্তে প্রতিবেদনে আসে অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

এসএমপির তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্য পরবর্তীতে বরখাস্তকৃতরা হলেন-সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। ঘটনার পর অন্য ছয় জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও এসআই আকবর পলাতক ছিলেন।  ১৯ অক্টোবর ফাঁড়ির তিন কনস্টেবল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের বর্ণনা ও মূলহোতা এসআই আকবরসহ নির্যাতনকরীদের নাম বলেন। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইর ওপর বর্তায়। ১০ নভেম্বর সকালে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে খাসিয়াদের সহযোগিতায় পুলিশ আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ আকবরকে পিবিআই কাছে হস্তান্তর করে। ২৪ নভেম্বর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে এসআই আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র ও রায়হান হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আকবরকে পালাতে সহযোগিতা করার অপরাধ খোঁজে বের করতে পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল ও রায়হানের বাড়ি পরিদর্শন করে। এই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের এই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়

পিবিআইতে প্রথম দিকে মামলাটি তদন্ত করেন পরিদর্শক মহিদুল হোসেন। তদন্তকালে তিনি করোনা আক্রান্ত হলে তদন্ত ন্যস্ত হয় পরিদর্শক আওলাদ হোসেনের ওপর।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন বলেন, তদন্তের সময় বাড়াতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানির পর আদালত ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করেন। এরপর হত্যা মামলার আদ্যোপ্রান্ত পর্যালোচনা করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন আইনি কোনো ফাঁকফোকর রয়ে গেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।