ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভয়ে চলে না যানবাহন, তার নাম মহাসড়ক!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২১
ভয়ে চলে না যানবাহন, তার নাম মহাসড়ক!

খুলনা: সড়কের কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় সেখানে মাথা তুলেছে ঘাসসহ নানা ধরনের আগাছা। ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে করা হয়েছে সবজি চাষ।

সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় চার লেনের সড়কের এক লেন দেখলে মনে হবে খানাখন্দে ভরা পরিত্যক্ত কোনো সড়ক। কিন্তু এটা খুলনা মহানগরীর অন্যতম মুজগুন্নী মহাসড়ক।

সড়কটির বর্তমানে এমন বেহাল অবস্থা যে সড়কের অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিংয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত ইট, সুরকি, পাথর ও বিটুমিন উঠে গেছে। এতে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। বাস ও ইজিবাইকে যাতায়াতেও পোহাতে হচ্ছে অসম্ভব ঝক্কি। এ সড়কে ভয়ে রিকশা চালকও ঢোকেন না। সড়কের এমন বেহাল দশায় এলাকার যানবাহনগুলোও চলছে ভিন্ন পথে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে সড়কে চলাচল করছেন পায়ে হেঁটে।

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ মুজগুন্নী মহাসড়ক। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কটি সর্বশেষ সংস্কার হয় ২০১২ সালে। এরপর আর সংস্কার হয়নি।

জানা গেছে, সোনাডাঙ্গা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড় পর্যন্ত এ সড়কটির অবস্থান। এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর সদর দপ্তর, নৌ-বাহিনীর ঘাঁটি (বানৌজা তিতুমীর), খুলনা কর অঞ্চলের কার্যালয়,  বিএনএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এ্যাংকরেজ স্কুল, নৌ-বাহিনী ভর্তি কেন্দ্র, নাবিক কলোনি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন, মুজগুন্নী শিশু পার্ক, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রায়েরমহল (অনার্স) কলেজ, নগরস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।

মুজগুন্নী এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কষ্টের শেষ নেই। কারণ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার এলাকার এ সড়কের কোথাও এখন মসৃণ নেই। বৃষ্টির ফলে গর্তগুলোতে পানি ভর্তি জমে থাকায় প্রতিদিন দুর্ভোগে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খানাখন্দে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ এ সড়কটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

মুজগুন্নী শিশুপার্ক এলাকার দোকানী নাজমুল হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে এ সড়কে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায়। সড়কের ওপর জমে থাকা পানিতে বোঝাই যায় না কোন গর্ত কত বড়। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। যানবাহনের পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে সড়কের গর্তের পানি ছিটকে পথচারীর কাপড় নষ্ট হচ্ছে। সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের।

এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়ির চালকরা বলেন, আমরা পুরোপুরি অসহায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুজগুন্নী সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে গাড়ি যন্ত্রাংশও নষ্ট হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহানা চৌধুরী কনিকা বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মুজগুন্নী মহাসড়ক দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কার হয়নি। রাস্তার একাংশ পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর অপর অংশে বিশাল বিশাল খানখন্দে ভরা। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে আমরা এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করে মহাসড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছি।
 

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মুজগুন্নী মহাসড়কের এস্টিমেট প্রস্তুত হয়ে গেছে। আজ কালকের মধ্যে ফাইল আমার কাছে চলে আসবে। সেখান থেকে মেয়রের টেবিলে পাঠানো হবে। ফাইলে মেয়রের সই হলেই দরপত্র আহবান করা হবে। আশা করি, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আট থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২১
এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।