কুড়িগ্রাম: নীল আকাশে সাদা মেঘের সঙ্গে ঢেউ খেলানো কাশবনের পাশাপাশি ঝাউবনের বেগুনি, গোলাপি, হলুদ ফুলের সমারোহ মাতিয়ে তুলেছে অবহেলিত চরাঞ্চলের দিগন্ত জোড়া জনপদের।
কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে শরতকালের মন মাতানো-চোখ জুড়ানো প্রকৃতির বাংলার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সাদা পালকের মতো কাশফুল।
হিমালয় পাদদেশীয় সর্ব উত্তোরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে- ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ফুলকুমোর, সোনাভরি, হলহলিয়া, জালছিড়া, জিঞ্জিরাম, গঙ্গাধর, নীলকমল, শিয়ালদহ, কালজানী, ধরনীসহ ১৬টি নদ-নদী।
চরাঞ্চলজুড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য ছড়ানো কাশবন আর ঝাউ বন ঘিরে অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি ও নিজেদের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে এসব নদ-নদী অববাহিকার প্রায় চার শতাধিক চরের মানুষজন।
ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ কাশবন ও ঝাউবনের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কৃষকদের চোখে মুখে এখন আনন্দের ছটা। ৭/৮ ফিট লম্বা কাশ আর ঝাউ গাছের বন খাদ্যের জোগান দেবে তাদের সংসারে।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সীমান্তবর্তী সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আলগার চরের কৃষক জব্বার মিয়া (৬০), খয়বর আলী (৫৫) বাংলানিউজকে জানান, নদীর চরাঞ্চলের পরিত্যক্ত বালু কচকচে জমিতে আবাদ না করেই কোনো খরচ ছাড়াই বেড়ে ওঠে কাশিয়া বা ঝাউ গাছ। বন্যার পর কার্তিক মাসে কাশিয়া ৭-৮ফুট লম্বা হলেই তা পরিপক্ক হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কাশিয়ার আঁটি হয়। তা কেটে আঁটি বেঁধে ৮/১০ টাকা করে বিক্রি করলে প্রতি বিঘা জমিতে কোন খরচ না করেই ১২/১৫ হাজার টাকা আয় হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কৃষকরা আরো জানান, এই কাশিয়া ও ঝাউ গাছ দিয়ে ঘরের বেড়া, চালের ছাউনি দেওয়ার পাশাপাশি ঝাড়ু বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে চরের মানুষ। এগুলো ছোট ছোট করে কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও হাটে সেগুলো বিক্রি করে বাড়তি আয় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনে।
চরাঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চরে প্রকৃতির আশির্বাদ এই কাশিয়া ও ঝাউবন বন্যার সময় নদীর স্রোতে গতি কমিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে জনপদকে। দুর্যোগকালে কাশিয়া গোখাদ্য হিসেবে গবাদিপশুকেও খাওয়ানো হয়।
চরাঞ্চলের কাশ ও ঝাউ ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কাশ ও ঝাউ বিভিন্ন চর থেকে কিনে নৌকাযোগে নদীপথে রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ দেশের অনেক স্থানে পাঠানো হয়। তা জ্বালানি হিসেবে ছাড়াও পানের বরজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
কাশফুল ও গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মির্জা নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়ায় না, এর রয়েছে নানা না ওষুধি গুণও। মানুষের পিত্তথলিতে পাথর, শরীরের ফোঁড়ার ব্যথা উপশমে কাশফুলের মূল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তিনি আরো জানান, কাশ আমাদের দেশে পরিচিত উদ্ভিদ হলেও এর আদি নিবাস রোমানিয়ায়। এর ইংরেজি নাম ক্যাটকিন এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো স্যাকরারাম এসপোটেনিয়াম। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠলেও আমাদের দেশে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
এফইএস/এএটি