রংপুর: টানা বৃষ্টিপাতে পানিতে তলিয়েছে রংপুর নগরী। একদিনে ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নগরীর রাস্তাঘাট, অলিগলিসহ বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯ থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুরে ২৬৫ মিলিমিটার। এর শুধু রাতের ৭ ঘণ্টায় জেলায় ২২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত এরকম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুরের ১০০ বছরের ইতিহাসে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। ফলে পুরো রংপুর শহর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
এদিকে গত দুদিন ধরে রংপুরে অব্যাহত বৃষ্টিপাতে তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদী বিধৌত নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি পানিতে তলিয়েছে। কোথাও কোথাও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। আর রংপুর নগরীর অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়কে ও পাড়া-মহল্লায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের মতো শহরের নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থইথই। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু। আবার কোথাও কোমর সমান পানি। শহরের জুম্মাপাড়া, আদর্শপাড়া, কামারপাড়া, বাবুখাঁ, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, মুলাটোল, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, খলিফাপাড়া, নগর মীরগঞ্জ, হোসেন বাজার, সর্দারপাড়া, মাস্টারপাড়া, ঈদগাঁহপাড়াসহ অন্তত ৫০টির মতো পাড়া-মহল্লায় বৃষ্টির পানি আটকে আছে। এতে ওই সব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনো কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে।
রাস্তাঘাট-দোকানপাট ও ঘরে পানি ওঠায় মানুষের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগে। অনেক রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। নগরবাসীর অভিযোগ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ১৬ কিলোমিটারের শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল ঠিকমতো ড্রেজিং না করাসহ অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
নগরীর সেনপাড়া এলাকার সংবাদকর্মী মেজবাহুল মোকার রবিন জানান, রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে শ্যামা সুন্দরী এখন পানিতে টইটুম্বর। বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এমন বৃষ্টি ২০২০ সালেও হয়েছিল। তবে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ক্যানেল পরিষ্কার থাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় পানি উঠেছে তা নিচু এলাকা। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছি পানিবন্দি মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার এ দুই দিন অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবার মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২১
কেএআর