ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গার রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২১
দুর্গার রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

ফেনী: বাতাসে দুলছে শুভ্র কাশফুল। দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা।

সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ঘিরে সর্বত্র বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। শেষ সময়ে দেবী দুর্গার রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত মৃৎ ও প্রতিমা শিল্পীরাও।

সোমবার (১১ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা।  

ফেনীতে পূজা নির্বিঘ্ন করতে সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নিজাম হাজারী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে পৃথকভাবে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়েছে।

জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গত ৬ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। তবে, পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আগামী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে। তাই পূজার আগে দুর্গার চার সন্তানসহ অন্যান্য দেবদেবীর পরিপূর্ণ রূপ ফুটিয়ে তুলতে দিন-রাত কাজ করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। এরই মধ্যে প্রতিমার অবয়ব তৈরি করেছেন তারা। এখন চলছে রং ও সাজসজ্জার কাজ। কারিগররা তাদের নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গার রূপ। কেউ রং করছেন, কেউ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন চোখ-মুখ, কেউবা আবার ব্যস্ত মণ্ডপ তৈরিতে। একইসঙ্গে একাধিক প্রতিমা তৈরির কাজে দম ফেলার ফুসরত নেই শিল্পীদের। করোনার কারণে আগের মতো আয়-রোজগার নেই কারিগরদের। তবুও দেবীর প্রতিমা তৈরি করতে পেরে তৃপ্ত তারা। প্রতিমা শিল্পী কানাই পাল বাংলানিউজকে বলেন, মায়ের প্রতিমা কিংবা দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। বর্তমানে করোনার কারণে সেই ধরনের আয়-রোজগার নেই। লোকসান হলেও আগামীতে কাজ করার আশায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মহালয়া হয়ে গেছে মানে আমাদের দেবী এসে গেছেন। এখন দেবীকে বরণ করে নেওয়ার পালা। এ মুহূর্তে রংয়ের কাজ চলছে। খুবই ব্যস্ত আছি এবং দ্রুত গতিতে এ কাজ এগিয়ে চলছে। দেবীর শাড়ি, অলংকার ও অন্যান্য সাজ পরানো হবে।

প্রতিমাশিল্পী বিধান আদি বলেন, এবার ফেনীর বাঁশপাড়া দুর্গা মন্দিরে বিগবাজেটের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি। শিল্পী তার নিজস্ব মনের মাধুরী মিশিয়ে রং ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রতিমাগুলো কারুকার্য ফুটিয়ে তোলে। তিনি এবার দেশে প্রায় ১০-১২টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন।  

ফেনীর বাঁশপাড়া, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও দেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গেও তারা কাজ করেন। প্রতিবারই ১২-১৫জন শ্রমিক নিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করেন বলে জানান ওই মৃৎশিল্পী।

ফেনী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, এবার ফেনীতে নতুন করে পাঁচটি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জেলার ১৪৩টি মণ্ডপে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজাকে ঘিরে বিভিন্ন ইউনিটে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। করোনার এ সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা পালনে প্রস্তুত সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তমতে, ১৮টি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, প্রতিমা নির্মাণসহ প্রতিমা নিরঞ্জনে শোভাযাত্রা পরিহার করা হবে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, করোনার এই সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো শারদীয় দুর্গাপূজা এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দর্শনার্থী ও সবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সব মন্দির কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতবারের মতো এবারও উৎসবের অংশটি বাদ দিয়ে শান্তিপূর্ণ চমৎকার পরিবেশে জেলার ১৪৩টি মণ্ডপে পূজা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  

তিনি বলেন, দেশের মধ্যে ব্যতিক্রমী ফেনীতে নিজাম উদ্দিন হাজারী প্রতিটি পূজামণ্ডপে তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেন।

বাঁশাপাড়া দুর্গামন্দিরের যুগ্ম সম্পাদক রাজীব পাল বলেন, গতবার করোনার কারণে এই পূজা আনন্দের সঙ্গে করতে পারিনি। এবার করোনার প্রকোপটা কম সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আশা করি, এবার পূজা করতে পারবো। পূজা উপলক্ষে এলাকাকে আরো সৌন্দর্যময় করে তুলতে এবার নতুন সংযোজন মায়ের আগমনী, শরৎকালের দৃশ্য, ঢাক-ঢোল ও আলপনা করে প্রায় ৫শ গজের মধ্যে দেওয়াল ও রাস্তা শিল্পী দিয়ে অলংকরণ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্ট অব রোড’। ফেনী পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সমর দেবনাথ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে দল-মত নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে উৎসব করবে এটাই প্রত্যাশা করি। বিভিন্ন মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি, বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়া পাঁচদিনের পূজায় দেশ ও বিশ্ব শান্তি কল্যাণে প্রার্থনা করা হবে।

জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সার্বিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। পূজায় যাতে কোনো দুষ্কৃতিকারী অপ্রীতিকর ঘটনা না করতে পারে সেজন্য গোয়েন্দা সদস্য, ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বরত থাকবেন। সবমিলিয়ে নিরাপত্তার দিকে দিয়ে যেন কোনো ধরনের ঘাটতি না হয় প্রতিবারের ন্যায় এবারও সেই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সনাতনী পঞ্জিকা মতে, দেবীদুর্গার এবার মর্ত্যে আগমণ ঘটবে ঘোড়ায় চড়ে এবং গমণ করবে দোলায়। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবীর বন্দনায় মত্ত থাকবেন ভক্তরা। আগামী ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।