ঢাকা: শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ দাপিয়ে বেড়াতেন ড. ইনামুল হক। নিজের শৈল্পিকতায় মঞ্চ থেকে দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়ে শিল্পের রসে ভেজাতেন দর্শকদের।
শিল্পের এ গুণীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যার আগ থেকেই শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় নাটকের সব শ্রেণির মানুষরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মরদেহ আনার পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রিয় মানুষ, প্রিয় শিক্ষক ও প্রিয় অভিনেতাকে হারানোর বেদনায় অশ্রুসজল হয়ে পড়ে দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে সন্ধ্যার এ শ্রদ্ধাঞ্জলী পর্বে ইনামুল হকের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নাট্যজন আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, তারিক আনাম খান, অভিনেত্রী ও নির্দেশক সারা যাকের, অনন্ত হিরা, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের চন্দন রেজা, মহকালের মীর জাহিদ, অনুবাদক ও নাট্যকার অধ্যাপক আবদুস সেলিম, অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ প্রমুখ।
প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জাসদ, আরণ্যক, থিয়েটার, প্রাচ্যনাট, দেশ নাটক, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন স্ত্রী লাকী ইনাম ও মেয়ে হৃদি হক।
শ্রদ্ধাঞ্জলী পর্বে বক্তারা বলেন, ড. ইনামুল হক একজন সজ্জন, নাট্যপ্রাণ ও দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। তার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নাটক, দেশ ও দেশের মানুষ। নিজের পরিবারের মতোই ভালোবাসতেন নাট্যাঙ্গনের মানুষদের। এভাবে তার চলে যাওয়াতে আমাদের নাট্যাঙ্গণের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল।
তারা বলেন, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাটক লিখে ও সংগঠন করে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। পুরো পরিবারকে তিনি নাটকের পরিবার হিসেবে গড়ে তুলেছেন। অসাম্প্রদায়িকতা ও দেশপ্রেমের জায়গায় তিনি ছিলেন আপসহীন। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এ রকম একজন গুণী মানুষকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো।
প্রয়াতের সহধর্মিনী লাকী ইনাম বলেন, সকালেও একসঙ্গে নাস্তা করেছি। সে খুব অভিমানি। আমাকে একা করে চলে গেল। আমি এখন কাকে নিয়ে, কী নিয়ে থাকবো? ইনাম চলে যাওয়াতে আমি একা হয়ে গেলাম। নাটকের এ সংগ্রাম কীভাবে আমি একাকী এগিয়ে নিয়ে যাব।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বেলায় ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে ড. ইনামুল হকের মরদেহ। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধাঞ্জলী শেষে বুয়েটের খেলার মাঠে দ্বিতীয় ও শেষ নামাজে জানাজার পর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২১
এইচএমএস/আরবি