খুলনা: প্রায় তিন বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। খুলনাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নও পূরণ হয়েছে।
খুলনার সাংস্কৃতিক সংগঠকদের দাবি আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত খুলে দেওয়া হোক আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের দ্বার।
তারা বলছেন, একটি আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের জন্য অনেক আন্দোলন করেছে খুলনাবাসী। এ জন্য মিছিল-সমাবেশ এমনকি হরতালও হয়েছে। অবশেষে নগরীর শেরেবাংলা রোডে পুরাতন নার্সিং ইনস্টিটিউটের জায়গায় শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। কিন্তু নির্মাণ শেষে ইতোমধ্যে তিন বছর পার হলেও উদ্বোধন হয়নি। এ অবস্থায় সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) উদীচী, খুলনা শাখার সদস্য সুখেন রায় বাংলানিউজকে বলেন, অবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমি চালু করা হোক। ঢাকায় শিল্পকলার অডিটরিয়মের ভাড়া করোনার কারণে মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু আর কোথাও সেটা করা হয়নি। আমরাও সেই সুযোগটি চাই। করোনার কারণে অনেক সংগঠন বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে আরও বন্ধ হয়ে যাবে। শহরের রিহার্সেল (মহড়া) করার মতো জায়গাও তেমন নেই। এ কারণে দ্রুত শিল্পকলা একাডেমির উদ্বোধন হওয়া দরকার।
আব্বাস উদ্দিন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, করোনার দীর্ঘ থাবা থেকে সবকিছুই মোটামুটি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, কিন্তু বন্ধ্যাত্ব কাটছে না খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীরা অর্থনৈতিকভাবে একেবারে পঙ্গু হয়ে আছে। তারপর নেই কোনো অনুষ্ঠানের অনুমতি বা অবস্থা। খুলনা অঞ্চলের মানুষের আশা আকাঙ্খার একমাত্র প্রতীক হয়ে উঠেছে এখন শিল্পকলা একাডেমি। খুলনায় আর কোনো মঞ্চ না থাকায় সাংস্কৃতিক কর্মীরা অপেক্ষায় আছে কবে খুলবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। বহুদিন আগেই এর নির্মাণ শেষ হয়েছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। কিন্তু সেই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না। অব্যবহৃত থাকায় দিনদিন নানানভাবে অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই অবিলম্বে আমাদের প্রাণের শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধন করার। এটির দ্বার খুললেই গতি ফিরে আসবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
খুলনা লেখক-শিল্পী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নাট্যশিল্পী কামরুল কাজল বাংলানিউজকে বলেন, শিল্পকলা হচ্ছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাণ। ঢাকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যদি নজর দেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করছে খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অধিকাংশ মানুষ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য খুলনাতে তারা সবাই নিজ নিজ উদ্যোগেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করে থাকেন। এক্ষেত্রে শিল্পকলার ভূমিকা কখনই তেমন দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, আমি যখন শিল্পকলাতে অভিনয় শেখার জন্য যাই তখন এটি সার্কিট হাউস হেলিপ্যাডের পাশে একটা গোলপাতার ঘরে একটি মাত্র রুমে অভিনয়, আবৃত্তি, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন, ও বাদ্যযন্ত্র শেখানো হতো। একটা ক্লাস চলাকালীন অন্যদের রাস্তায় অপেক্ষা করতে হত, কখন তাদের ছুটি হবে? সেখান থেকে সরিয়ে এই বাড়ি, ওই বাড়ি করে অনেক বাড়ি ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে শিল্পকলা একাডেমিকে। শিল্পকলার স্থায়ী ভবনের জন্য আমরা মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছি। পত্রিকায়ও এ নিয়ে ব্যপক লেখালেখি হয়েছে। অবশেষে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ হলেও নানা অজুহাতে সেটা এখনও উদ্বোধন করাই হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গত ১১ অক্টোবর কালচারাল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, শিল্পকলা একাডেমি কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে পারে এ ব্যপারে কিছুই জানেন না। এভাবে যদি বছরের পর বছর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এমন একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে যুব সমাজ নিশ্চিত অন্য লাইনে হাঁটবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই অনতিবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমি খুলে দেওয়া হোক এবং সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকশে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাক।
কবে শিল্পকলা একাডেমির উদ্বোধন হবে জানতে চাইলে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিল্পকলা একাডেমির পুরো প্রকল্প একসঙ্গে উদ্বোধন করবেন। কয়েকটি জেলার শিল্পকলা একাডেমির কাজ বাকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে যে কোন সময় শিল্পকলা একাডেমির উদ্বোধন করা হবে। খুলনায় একাডেমির অনেকগুলো কাজের করেকশন ছিলো তা হয়ে গেছে। একাডেমি উদ্বোধন করা হলে এটি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব পরিকল্পনার বাইরে কেউ চাইলে যৌথ আয়োজনেও অনুষ্ঠান করতে পারবে এখানে।
উল্লেখ্য, সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নগরীর শেরেবাংলা রোডের পুরাতন নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৮০ শতক জমিতে বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি প্রকল্পটির কাজ পায়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি সেই কাজ। পরে প্রকল্প ব্যয় ৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যেখানে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে সেখানে আগে পুকুর ছিলো। পুকুরটিকে রেখে তার ওপরে মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পুকুরের ওপর মুক্তমঞ্চ এটা দেশে প্রথম। এ মঞ্চে এক সঙ্গে প্রায় ৫শ জন বসতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড