ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর তীরে জেগে ওঠা প্রায় দশ হাজার একর জমি এখন সিন্ডিকেটের দখলে। উপকূলীয় এলাকার হাজারও মৎস্যজীবী এই চরাঞ্চলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
বর্তমানে ওইসব জমিতে মাছ ধরতে বা গবাদি পশু চরাতে গেলে হামলার শিকার হচ্ছেন মৎস্যজীবী ও খামারিরা। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা টং ঘরে অবস্থান করে রাতে মাদকের আসর বসায়। খামারের আশপাশে প্রায় দেখা যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হুইস্কি ও ফেনসিডিলের খালি বোতল। তবে এতকিছুর পরেও দুর্গম চরাঞ্চলে পড়ে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদচিহ্ন। ফলে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দখলদাররা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০১২ সাল থেকে বাঁকা নদী সোজাকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চরআবদুল্লাহ, চর এলেন, আবুইল্লার চর, থাক খোয়াজের লামছি ও নূনার চরে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে চর জেগে ওঠে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব চরে চলছে দখল বাণিজ্য।
জেলেরা জানিয়েছেন, আবুইল্লাহর চরে দখল সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছেন চরচান্দিয়া ইউনিয়নের আবুল হাশেম, শেখ ফরিদ, করিমুল হক ও হেলাল উদ্দিন। থাক খোয়াজের লামছি দখল সিন্ডিকেটে রয়েছেন শাহ আলম, মাছ কাদের, হুমায়ূন কবির, ফজলুল করিম, আনিছুল হক, জসিম উদ্দিন ও মিয়াধন। চর এলেন দখল সিন্ডিকেটে রয়েছেন গোলাম সারোয়ার, গিয়াস উদ্দিন, আবুল বশর ও মোশারফ হোসেন। চর নাসরিন ও নূনার চর দখল সিন্ডিকেটে রয়েছেন সবুজ, নুরুল করিম, নিজাম উদ্দিন, শেখ ফরিদ, আবুল হাসেম, মিজানুর রহমান, নুরুল আবছার ও আহমেদ করিম।
মৎস্যজীবী আবুল কাশেম বেল্টু বাংলানিউজকে বলেন, শতাধিক জেলে চরাঞ্চলে জাল বসিয়ে সামু্দ্রিক মাছ ধরে সোনাগাজীর হাটে বিক্রি করতো। কিন্তু দখলদারদের কারণে এখন চরাঞ্চলে জাল বসাতে গেলেই মারধরের শিকার হতে হয়। একই কথা জানান মংস্যজীবী জনার্দন জলদাশও। তিনি বলেন, জলদাশ পাড়ার শতাধিক জেলে এখন মাছ ধরতে না পেরে ও হামলার আশঙ্কায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সাহাব উদ্দিন নামে অপর এক মৎস্যজীবী বাংলানিউজকে জানান, দখলদারদের হামলা ও হয়রানি থেকে বাঁচতে গত ১১ সেপ্টেম্বর গণস্বাক্ষর করে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু এখনও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১০ অক্টোবর আবুইল্লার চর এলাকায় চাঁদা না পেয়ে মারধর করা হয় খামারি ইমাম হোসেনকে। এ ঘটনায় করিমুল হক ও তার লোকজনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তারও দুই দিন আগে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন আইয়ূব নামে এক মৎস্যজীবী। তবে ভয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে পারেননি।
খামারি আনোয়ারুল কবির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের জমি অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় অনেক খামারি গরু, মহিষ ও ভেড়া বিক্রি করে খামার গুটিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সরকার থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ, খামারি ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাগাজী ইউএনও এ এম জহিরুল হায়াত। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ওই দিনই সেটি সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, সরকারি জমি দেখাশোনা করেন ইউএনও ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড)। মৎস্যজীবী ও খামারিরা হামলার শিকার হলে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে যে অভিযোগটি পেয়েছি সেটির তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
এসএইচডি/এনএসআর