ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মহাসড়কে রিকশা-ইজিবাইকের রাজত্ব

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
মহাসড়কে রিকশা-ইজিবাইকের রাজত্ব

গাজীপুর: মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও রাজত্ব করছে ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা।

গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বাহন।

ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইক ও অটোরিকশার চালকরা আইন মানতে নারাজ। মহাসড়ক বড় থাকলেও এসব চালকরা উল্টো পথেই চলে। ইউটার্ন নেওয়ার ধার ধারে না এসব বাহনের চালকরা। ডিভাইডারের ওপর দিয়েই পার করছে তাদের ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকগুলো।

মহাসড়কে এসব বাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ পুলিশ বিষয়টি স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে তেমন আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশের সহযোগিতায় এসব বাহন মহাসড়কে রাজত্ব করছে এবং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া মহাসড়কে এগুলো চলা সম্ভব না।

 

এলাকাবাসী, পুলিশ ও বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী থেকে কালিয়াকৈর বাজার পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক রাজত্ব করছে। এসব বাহনের  চালকরা দ্রুত গতিতে উল্টো পথে চলে। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না।   এসব বাহনের কারণে মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা এবং সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। হাইওয়ে পুলিশও এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ হাইওয়ে পুলিশ ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয়। ফলে ওইসব বাহনের চালকরা পুলিশকে তোয়াক্কা করে না। পুলিশের সামনে দিয়েই  চলে মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার এসব বাহন। যেসব চালক মাসোহারা দেয় না, তাদের রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় শতশত ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক। হাইওয়ে পুলিশ এসব এলাকায় ডিউটিরত অবস্থায় থাকলেও মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে পুলিশের দাবি কোন ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে তারা টাকা-পয়সা নেয় না।

এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোতাপাড়া, বাঘের বাজার, মাওনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধে ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তেলিপাড়া এলাকায় সড়ক বিভাজনের ওপর দিয়েই অবৈধভাবে ইউটার্ন নিচ্ছে এসব বাহন। এতে ভারী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা এবং যানজটের কারণ হয়।

এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া থেকে কোনাবাড়ী পর্যন্ত চলে হাজার হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এসব বাহনের কারণে প্রতিদিন চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া এলাকায় দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চলে এসব বাহন। ফলে সড়কের অর্ধেক এসব বাহনের দখলেই থাকে।

চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক আনিসুর রহমান বলেন, মহাসড়কে দ্রুত রিকশা চালানো যায় এবং যাত্রী বেশি থাকে। ফলে আয়-রোজগার বেশি হয়। এজন্য মহাসড়কেই রিকশা চালাই। যারা পুলিশকে মাসে মাসে টাকা দেয় মহাসড়কে তাদের কোন সমস্যা হয় না।  

মৌচাক এলাকায় ইজিবাইক চালক সাঈদ মিয়া বলেন, আঞ্চলিক সড়কগুলোর বেশিরভাগই ভাঙাচোরা। ওইসব সড়কে চালালে ইজিবাইকের ক্ষতি হয়। এছাড়া যাত্রীও কম থাকে এবং যাত্রীদের জন্য দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। ফলে আয়-রোজগারেএকেবারেই কম হয়। অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রী বেশি থাকে, আয়-রোজগারও বেশি হয়। তাই এ মহাসড়কেই ইজিবাইক চালাচ্ছি।

এ ব্যাপারে সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক বলেন, মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গত ৮/১০ দিনে এসব যানবাহনকে ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ এগুলো। কয়েক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন মারা গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রতি মাসে মাসোহারা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এ থানায় টাকা নেওয়ার মতো কেউ নেই।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি, ট্রাফিক) মাসুদুর রহমান বলেন, এগুলো পুরোই অবৈধ। আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো থেকে প্রতিদিনই এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইক ও অটোরিকশা ডাম্পিং করি। কী পরিমাণ যে অটো তা কল্পনার বাইরে। প্রতিদিনই ডাম্পিং করি। এগুলো রাখতে রাখতে জায়গাও এখন নেই। কন্ট্রোলে আনতে পারছি না। পুলিশ যথেষ্ট চেষ্টা করছে, প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মহাসড়কে এসব বাহন চলতে পারবে না, আইনগত বিধিনিষেধ আছে। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। তবে যতগুলো পারছি ডাম্পিং করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২১
আরএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।