নাটোর: পাওনা টাকা না দেওয়ায় নাটোরের গুরুদাসপুরে কাশেম আলী (৪২) নামে এক কৃষককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার (০৩ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজ মোড়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত কাশেম নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের সাইদ আলীর ছেলে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, কাশেম বিদেশ থেকে ফেরার পর কৃষি কাজের পাশাপাশি বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় কেনাল নামে ওই ব্যবসায়ী বিদেশ যাওয়ার প্রায় চার লাখ টাকা দেন কাশেম আলীকে। কিন্তু বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় কাশেমের কাছ থেকে টাকা ফেরত চান কেনাল। এতে দুই লাখ টাকা ফেরত দেন কাসেম।
পরে অবশিষ্ট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও কাশেম ওই টাকা দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে আরও এক লাখ টাকা ফেরত দেন কাশেম। এছাড়া তার স্বাক্ষরিত একটি ফাঁকা চেকের পাতাও দেন।
এরপর বাকি ৮০ হাজার টাকার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকলে কাসেম ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে সম্মত হন এবং ফাঁকা চেকটি ফেরত চান। কিন্তু এতে রাজি হন না পাওনাদার কেনাল। উপরোন্ত চেকটি হারিয়ে গেছে বলে প্রচার করতে থাকেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কাশেম ওই চেক ফেরত না দিলে অবশিষ্ট টাকা তাকে দেবে না বলে জানিয়ে দেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কেনাল।
এরপর বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে নাজিরপুর বাজারের দিকে যাচ্ছিল কাশেম। নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজের সামনে পৌঁছালে তার পথ রোধ করে প্রথমে কাঠের বাটাম দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে কেনাল। এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কাশেম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় কেনাল ধারালো ছুরি দিয়ে কাশেমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে দ্রুত সটকে পড়েন।
এ সময় কাশেমের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে কাশেম আলী মারা যান।
ওসি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেনালকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিহত কৃষক কাশেমের বড় ভাই হাসেম আলী বলেন, কাশেম দীর্ঘ ৭ বছর ইরাকে ছিলেন। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। কাশেমের এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। কেনাল যে টাকা পাওনা ছিল তা কাশেম দিতেও চেয়েছে। কেনালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩, নভেম্বর ৩, ২০২১
কেএআর