নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুরে বিনাহালে রসুন উৎপাদনে বীজ রোপণ কাজ শুরু হয়েছে। আর রসুন চাষাবাদকে ঘিরে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন বসছে দিনমজুরদের জমজমাট হাট।
শনিবার (০৬ নভেম্বর) সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলাধীন বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের নয়াবাজার, কাছিকাটা, হাজীরহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিনাচাষে রসুন লাগানো ও ধানকাটাসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ দিনমজুরের হাট এসে সমবেত হচ্ছে।
পেটের তাগিদে প্রতিদিন ভোর ৪টায় ওই সব ওই হাটে আসেন দিনমজুররা। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে শ্রমিক কেনাবেচা। ওই হাট থেকে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য চাহিদা মতো দিনমজুর খরিদ করে নিয়ে যান স্থানীয় কৃষকরা।
ধারাবারিষা এলাকার ফয়জাল, নয়াবাজারের মো. মুন্না, হাসমারীর সোহাগ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া উপজেলা ও পাবনা জেলার চাটমহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাসড়কের নয়াবাজার, কাছিকাটা, হাজীরহাট পয়েন্টে ভোর ৪টা থেকে এসব দিনমজুর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নছিমন-করিমন, ট্রাকে ও বাসের ছাদে চড়ে এসে হাট বসায়। সেখান থেকে নারী-পুরুষ দিনমজুররা দিনচুক্তি অথবা কাজচুক্তি হিসেবে উচ্চ মূল্যে মহাজনের কাছে বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে কাজ অনুযায়ী তাদের আর্থিক চাহিদা বিভিন্ন পর্যায়ের হলেও মোটামুটি প্রতিদিন পুরুষ দিন মজুরের মজুরি ৫০০-৬০০ টাকা এবং নারী দিনমজুরের মজুরি ৩০০-৪০০ টাকা দেওয়া হয়। আর বেলা বাড়লে বসে থাকা দিনমজুরের মূল্য আনুপাতিকহারে কম হয়ে থাকে। আবার সারাদিন না খেয়ে কাজ করার মজুরি এবং তিন সন্ধ্যা খাবার দিয়ে কাজ করার মজুরির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
তারা আরো জানান, যদিও মজুরি একটু বেশি তারপরও হাতের কাছে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। এতে তাদের অনেকটা উপকারই হচ্ছে।
নয়াবাজার দিনমজুর হাটে অপেক্ষমান দিনমজুর মান্নান নগরের জালাল আলী বাংলানিউজকে জানান, তার সংসারে ৭ জন সদস্য এবং তার একার উপার্জনের ওপরই তারা নির্ভরশীল। দিবারাত্রী কাজ করেও তার অভাব যায় না।
নয়াবাজার দিনমজুর হাটের মহিলা শ্রমিক ৪ সন্তানের জননী আমেনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, তার স্বামী একজন দিনমজুর ছিলেন। এখন তিনি অর্ধাঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। তাই তিনি সন্তানাদি ফেলে দিনমজুর হাটে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তার ওপরেই সংসারের নির্ভর করছে।
তাড়াশের রহিজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জের মনির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ৩৫-৪৫ টাকা ভাড়া দিয়ে তারা এ শ্রমিকহাটে এসেছেন। যেতে আবার ৩৫-৪৫ টাকা খরচ লাগবে। তবে আগের চেয়ে এ বছর মজুরির দাম অনেক ভাল। এজন্য ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে এসেও কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২১
এনটি