রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীতে চালককে গলাকেটে হত্যার করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু, মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন, আগের একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জরিমানার ১৫ হাজার টাকা জোগার করতে পারছিল না তারা। শেষ পর্যন্ত ওই টাকা জোগার করতে আবারও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন তারা। এবার তাদের হাতে খুন হন ওই অটোরিকশা চালক।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মিয়াপাড়ার গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে আল-আমিন (২১), বাঘা থানার মালি আনদাহো গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে জনি (২১) ও নাটোর জেলার লালপুর থানার মহরকয়া গ্রামের দিরাজ মণ্ডলের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩৫)।
তাদের গ্রেফতারের পর রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় আরএমপি কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে অটোরিকশা চালক হত্যাকাণ্ডের রহস্য তুলে ধরেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জানান, ৬ অক্টোবর দিনগত রাত ১টার দিকে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ সাগরপাড়া নেসকো অফিসের পাশের ড্রেনে পরে থাকা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে। ওই সময় নিহতের মরদেহের পকেটে থাকা একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পুলিশ জানতে পারে নিহত ব্যক্তি রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার মৃত কবেজ প্রামাণিকের ছেলে। তার নাম আবদুল কাদের (৫৫)। এ হত্যাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। পরে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় আরএমপি অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। এরপর তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে বোয়ালিয়া থানার একটি টিম ৬ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত আল-আমিনকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুসহ চারঘাট থেকে গ্রেফতার করে।
পরে গ্রেফতারকৃত আসামি আল-আমিনের দেওয়া তথ্য মতে তার সহযোগী অপর আসামি জনিকে বাঘা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং চোরাই অটোরিকশা কেনার অপরাধে নাটোর লালপুর থেকে অটোরিকশা যন্ত্রাংশসহ অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক আরিফুল ইসলামকেও গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ইতোপূর্বে আল-আমিন ও পলাতক আসামি কাউসার অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় কাউসার হাতেনাতে আটক হলেও আল-আমিন কৌশলে পালিতে সক্ষম হয়। সেখানে উপস্থিত লোকজন কাউসারকে গণধোলাই দিয়ে চারঘাট থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে কাউসারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর কাউসার ও আল-আমিন এই জরিমানার টাকা জোগার করতে পারছিল না। এরপর আবারও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাত ১২টার দিকে আবদুল কাদেরের অটোরিকশা ভাড়া করে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন।
পরে নির্জন এলাকা দেখে ধারালো চাকু দিয়ে গলাকেটে কাদেরকে খুন করে তার মরদেহ সাগরপাড়া নেসকো অফিসের পাশের ড্রেনে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ছিনতাই করা অটোরিকশাটি আসামি আরিফুলের কাছে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। আরিফুল নগদ ২২ হাজার টাকা দেয় আর চার্জার পেলে অবশিষ্ট দুই হাজার টাকা পরিশোধ করবে বলে জানায়।
এই ২২ হাজার টাকার মধ্যে আগের জরিমানা বাবদ ১৫ হাজার টাকা নেয় কাউসার। অবশিষ্ট টাকা আসামি আল-আমিন, জনি এবং কাউসারের বাবা মাহাবুবুর ভাগাভাগি করে নেয়।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে হত্যাকাণ্ডের অপর সহযোগী আসামি কাউসার ঘটনার পরদিনই গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পালিয়ে গেছে। ঘটনার দিন কাউসার যে ফোন ব্যবহার করেছিলো সেটা তার বাড়িতে বাবার কাছ থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তাকে শিগগিরই গ্রেফতার করা সম্ভব যাবে।
এ ঘটনায় গ্রেফতারদের নামে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২১
এসএস/এএটি