ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘অপারেশন এক্স’ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনন্য দলিল

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২১
‘অপারেশন এক্স’ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনন্য দলিল

ঢাকা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যৌথ নৌ-কমান্ডো অভিযানের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা ‘অপারেশন এক্স’ বইটির বাংলা সংস্করণ পাঠ ও পর্যালোচনা নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বইটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যন্য দলিল।

 

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে বইটির পাঠ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

এদিন ভারতীয় হাইকমিশনে ‘অপারেশন এক্স’ বইটির বাংলা সংস্করণ পাঠ ও পর্যালোচনা নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বইটির বাংলা সংস্করণ পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নেন সাংবাদিক সালিম সামাদ ও ভারতের সাংবাদিক সন্দীপ উন্নিথান। বইটির পাঠ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ-কমান্ডের বেশ কয়েকজন সৈনিক অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘অপারেশন এক্স’ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা কাহিনী উঠে এসেছে। এটা পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের গোপন নৌযুদ্ধের অপ্রকাশিত গল্প। বইটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অন্যন্য দলিল।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নৌ অপারেশন নিয়ে ‘অপারেশন এক্স’ বইটি লিখেছেন ক্যাপ্টেন এম এন আর সামন্ত ও সন্দীপ উন্নিথান। অপারেশনটির পরিকল্পনা করেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এস এম নন্দা ও ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে ভাইস অ্যাডমিরাল) মিহির কে রায় দ্বারা ধারণা করা হয়েছিল। আর একে বাস্তবে রূপদান করেছিলেন ক্যাপ্টেন এম এন আর সামন্ত। ৪৫০ জনেরও বেশি নৌ-কমান্ডোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছিল যাতে নৌযান, জেটি এবং সামুদ্রিক অবকাঠামো ধ্বংস করে পাকিস্তানি সামরিক ও খাদ্য সরবরাহ লাইনগুলোকে ব্যাহত করে দেওয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিজেদের জন্য পুনরায় রসদ যোগান দিতে না পারে। ফলে শেষ পর্যন্ত ১৩ দিনের মধ্যেই তাদের দ্রুত আত্মসমর্পণ করতে হয়। কমান্ডো অপারেশনের পাশাপাশি বইটিতে গানবোট পদ্মা ও পলাশ দ্বারা মোংলা বন্দরে অভিযানের কথাও বলা হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর দেওয়া গানবোট দুটিতে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেরই নাবিক ছিল।  

নেভাল কমান্ডো ‘অপারেশন এক্স’ বা এনসিও (এক্স) ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর অংশ, যার অধীনে মুক্তিবাহিনীর গোপন প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। সামগ্রিকভাবে ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে কমান্ডোরা এক লাখ টন শত্রু নৌযান ডুবিয়ে ও বিকল করে দেয়। একইসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের বন্দরগুলো সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ করে। প্রকৃতপক্ষে এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বে পরিচালিত বৃহত্তম গোপন অভিযান। ৪৮ বছর ধরে অপ্রকাশিত থাকা এ গল্পটি প্রথম ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। ক্যাপ্টেন এম এন আর সামন্তের ব্যক্তিগত নোট ও অপারেশনে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় নৌসেনাদের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে সংকলিত হয়েছে।

এম এন আর সামন্তকে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২০ মার্চ তিনি মারা যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২১
টিআর/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।