ঢাকা: ডিজেলচালিত গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণায় যাচ্ছেতাই ভাড়া আদায়ের ধুম পড়েছে। সিটি পরিবহনের মতো দূরপাল্লায় আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসগুলোতেও মানা হচ্ছে না নির্ধারিত নিয়ম-নীতি।
এ নিয়ে বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিট বিক্রেতাদের সঙ্গে যাত্রীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে। এরপরেও বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়াতেই গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন সবাই। নির্ধারিত বাড়তি ভাড়ার হারের নিয়ম না মানার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারছেন না কাউন্টারের দায়িত্বরতরা। তাদের বক্তব্য, মালিকের নির্দেশ মতো বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, এর বেশি তারা কিছু জানে না।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, বাড়তি ভাড়ার ঘোষণা দিয়ে সবকিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্টরা চুপ করে বসে আছেন। কোন রুটে কোন পরিবহনে কতো টাকা বাড়তি আদায় করবে এর কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। নজরদারির অভাবে পরিবহনগুলো সুযোগ বুঝে যেমন খুশি তেমন ভাড়া আদায় শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর অন্যতম বাসস্ট্যান্ড গাবতলী-কল্যাণপুর এলাকার কাউন্টার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কল্যাণপুরে হানিফ বাস কাউন্টারে চট্টগ্রাম পর্যন্ত টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ৬০০ টাকা। আগে এ রুটে ৪৮০ টাকা ভাড়া থাকলেও এক লাফে টিকিটপ্রতি ১২০ টাকা বাড়তি আদায় করা হচ্ছে।
কিলোমিটারপ্রতি বাড়তি ভাড়া হিসেবে কতো টাকা দাঁড়ায় এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্টারে কর্মরত জসীম কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর মালিকপক্ষ যেমন নির্দেশনা দিয়েছে সে অনুযায়ী ভাড়া রাখা হচ্ছে। এর বেশি আমরা কিছু বলতে পারবো না।
চট্টগ্রাম যেতে ইচ্ছুক রাতুল নামে এক যাত্রী বলেন, তেলের দাম বাড়ানো হলো, এরপর ধর্মঘটের নাটক চললো। আসলে ধর্মঘট তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হয়নি, এটা ভাড়া বাড়ানোর ধান্দা। এখন ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা পেয়ে যেমন খুশি তেমন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই, এটা দেখারও যেন কেউ নেই।
একইভাবে গাবতলীতে সৌখিন পরিবহনে ফরিদপুরগামী ৩০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে এখন ৫৫০ টাকায়। এ নিয়ে টিকিট ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাগবিতণ্ডা দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০-৫০ টাকা কম রাখা হচ্ছে, যেন কারো কোনো নিয়ম মানার বালাই নেই।
রামজান নামে এক যাত্রী বলেন, ফরিদপুর পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। সরকার ঘোষিত নতুন ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৩৭০-৮০ টাকা আসতে পারে। অথচ ভাড়া রাখা হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা, প্রায় দ্বিগুন। যাই হোক এ দেশে ভুক্তভোগী সেই জনগণ। এসব দেখার কেউ নেই, বলেও লাভ নেই।
শ্যামলী পরিবহনে কুষ্টিয়াগামী বাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দামে, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা হাসান বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ীই বাড়তি ভাড়া রাখা হচ্ছে। এর বেশি বা কম রাখা হচ্ছে না। কিলোমিটারপ্রতি বাড়তি ভাড়ার হিসেবে কুষ্টিয়া পর্যন্ত কতো হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতো হিসেব আমরা বলতে পারবো না। মালিকপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়া রাখা হচ্ছে।
একইভাবে নতুন ভাড়া অনুযায়ী রংপুরে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা, বগুড়ায় ৩৫০ টাকার বদলে ৪৫০ টাকা, নওগাঁয় ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৫৫০ টাকা, জয়পুরহাটে ৪৫০ টাকার টিকিট ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর গণপরিবহনের যেমন খুশি তেমন ভাড়া আদায় বন্ধ এবং যাত্রী ভোগান্তি কমাতে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছে বিআরটিএ। গাবতলী, মহাখালী, উত্তরাসহ রাজধানীর নয়টি পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বর্ধিত ভাড়া, বাসের ফিটনেস ও বৈধতার বিষয়গুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।
বিআরটিএ জানায়, অতিরিক্তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। সে কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে নতুন ভাড়ার চার্ট পৌঁছে দেওয়া হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী বাসের বর্ধিত ভাড়ার চার্ট মঙ্গলবার থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বাস ও কাউন্টারগুলোতে থাকতে হবে, অন্যথায় ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২১
পিএম/আরবি