ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরি, খুশিতে কাঁদলেন মেয়ের বাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২১
ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরি, খুশিতে কাঁদলেন মেয়ের বাবা জুঁই ও তার বাবা মো. জিল্লুর রহমান। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: ‘কখনও ভাবিনি ঘুষ ছাড়া আমার মেয়ের চাকরি হবে। আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।

এখন আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হলো। আমরাও চিন্তামুক্ত হলাম। ’ এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত জুঁইয়ের বাবা মো. জিল্লুর রহমান।

সোমবার (০৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নতুন পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে মেয়ের চাকরির খবর পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি হতদরিদ্র এই কৃষক।

তিনি বলেন, ‘সব সময় চেয়েছি আমার মেয়েরা কিছু করুক। ছেলে নেই তো কি হয়েছে। আল্লাহ মেয়ে দিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে মেয়েদের পড়াশোনা চালু রেখেছি। তবে তাদের চাকরি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমার টাকা নেই। নেই বড় কোনো আত্মীয়-স্বজনও। তারপরও আল্লাহর রহমতে মেধার জোরে আমার মেয়ের চাকরি হয়েছে। ’

কোনো প্রকার সুপারিশ ও ঘুষ ছাড়া চাকরি দেওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তবে শুধু জুঁই নয়, কনস্টেবল পদে বাগেরহাট জেলায় নিয়োগ পাওয়া ৩১ জনের বেশিরভাগই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে খুশি তারা।

কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতরা।  ছবি: বাংলানিউজ

এদিন রাতে পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক কনস্টেবল পদে নির্বাচিতদের নাম ও রোল নম্বর ঘোষণা করেন। এ সময় নতুন পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানরা অভিভাবকদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। সবার দোয়া চান তারা।

এদিকে ১৩০ টাকা আবেদন ও লিখিত ফি দিয়ে কনস্টেবল পদে মেয়ের চাকরি হওয়ায় খুশিতে কাঁদছিলেন মোস্তফা মোল্লা। কচুয়া উপজেলার বারুইখালি গ্রামে সবজি বিক্রি করেন তিনি। মেয়ের চাকরির খবরে খুশিতে কথাই বলতে পারছিলেন না।

তার মেয়ে লাবনী খানম বলেন, ‘আমরা সাত বোন। কোনো ভাই নেই। বাবা-মায়ের সব চিন্তা আমাদের নিয়ে। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে এসএসসি পাশের পর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির চেষ্টা করেছি, হয়নি। আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়েছে। এখন সংসারের পাশাপাশি ছোট বোনদের পড়াশোনার জন্যও কিছু টাকা দিতে পারবো। ‘

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে আবেদনের পরে ২৯ নভেম্বর থেকে ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল পদে ৩১ জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে বাগেরহাট জেলা পুলিশ। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ছয়জন নারী।

ফলাফল ঘোষণা শেষে বাগেরহাট পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়েছি। চেষ্টা করেছি, মেধাবীদের পুলিশ সদস্য হিসেবে কাজের সুযোগ দেওয়ার।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকে আমরা সতর্কতার সঙ্গে দালাল ও প্রতারক চক্রদের দমনের চেষ্টা করেছি। এর অংশ হিসেবে তিন জন প্রতারককে আটক করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।