ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকায় কিছু করার ইচ্ছায় কর্ণফুলী মার্কেটে স্বর্ণচুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
ঢাকায় কিছু করার ইচ্ছায় কর্ণফুলী মার্কেটে স্বর্ণচুরি কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি থেকে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরিতে আটক দুই জন

ঢাকা: ফরিদপুরের শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৮) ও বরিশালের শৈশব রায় ওরফে সুমন (৩৫) নিজ এলাকায় চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এক সময় তাদের মনে হলো ঢাকায় এসে কিছু করবেন।

সেই অনুযায়ী পূর্ব পরিচিত পুরান ঢাকার ক্ষুদ্র স্বর্ণ ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা।

পরে ঢাকায় এসে বিভিন্ন মার্কেটে স্বর্ণের দোকান রেকি করতে থাকেন তারা। কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত দুর্বল মনে হওয়ায় এটিকেই টার্গেট হিসেবে বেছে নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন রাতে মার্কেটের দুটি স্বর্ণের দোকানের তালা ভেঙে ৭০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরিও করেন।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির দুই দোকান থেকে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০১ ভরি স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। গত ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি জানায়, এই চুরির নেতৃত্ব দেয় শাহিন। তবে শাহিন ও শৈশব ঢাকায় আসেন ঘটনার ১৫ দিন আগে। তাদের তাঁতীবাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন উত্তম। এছাড়া চুরির জন্য যা টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে তাও বহন করে উত্তম। তারা ওই বোর্ডিংয়ে থাকার সময় উত্তমকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে রেকি করেন।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের মোহনা জুয়েলার্স ও বেস্ট অ্যান্ড ক্রিয়েশন জুয়েল এ্যাভিনিউ জুয়েলার্স নামক দুটি সোনার দোকানে প্রায় ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা হয় রমনা থানায়।   মামলা হওয়ার পর এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা ছায়া তদন্তের শুরুতে চোরদের গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হই।

তিনি আরও বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পারি শৈশব ও শামীম দু’জনই নিজ নিজ এলাকায় চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। একদিন তাদের মনে হল ঢাকায় এসে কিছু করবেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পূর্বপরিচিত উত্তম রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। পরে তারা তিন জন মিলে চুরির পরিকল্পনা করেন।

ডিবি প্রধান বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উত্তম তাঁতীবাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়ে শাহিন ও শৈশবকে রাখে ঘটনার ১৫ দিন আগে। পরে তারা তিন জন মিলে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে চুরি করার জন্য রেকি করা শুরু করেন। রেকিতে দেখতে পান অন্য যে কোনো মার্কেটের তুলনায় কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক কম। পরে তারা সেখানে চুরির পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, ঘটনার চার দিন আগে তারা মার্কেটিতে চেষ্টা করেও চুরি করতে ব্যর্থ হয়। পরে তারা ঘটনার দিন মার্কেটের পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবন দিয়ে বেয়ে মার্কেটের একটি বাথরুমে ঢোকেন। বাথরুম থেকে তারা মার্কেটে ঢুকে দুই দোকান থেকে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে পালিয়ে যান।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা সোনার পাশাপাশি একটি দোকান থেকে কিছু হিরাও চুরি করেছে। কিন্তু চুরি করে যাওয়ার সময় হিরা ও সোনা থাকা একটি ব্যাগ রাস্তায় পরে যায়। এর মধ্যে রাস্তা থেকে ২২ ভরি সোনা পাওয়া গেছে যা রমনা থানায় জমা রয়েছে। আর রাস্তায় পড়ে যাওয়া সোনা ও হিরা কেউ যদি পেয়ে থাকলে তাদের প্রতি অনুরোধ তারা যেন এসব জিনিস দ্রুত স্থানীয় থানায় জমা দেন। যদি কেউ তা না করেন আর আমাদের তদন্তে যদি তাদের নাম পাই তাহলে চোরাই মাল রাখার দায়ে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকালে আমরা দেখেছি, কল্পনা বোর্ডিংয়ে চোরেরা কোনো ধরনের নাম এন্ট্রি করেনি। কিন্তু ডিএমপি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে হোটেলে নাম এন্ট্রি করার। কল্পনা বোর্ডিংয়ে তাদের নাম এন্ট্রি করা থাকলে আমরা তাদের আরও সহজে ধরতে পারতাম। এ বিষয়ে আমরা কল্পনা বোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, আমরা আরও একটি বিষয় বলে রাখতে চাই, কেউ যদি মনে করে গ্রাম থেকে এসে ঢাকায় এসে চুরি করে সহজে চলে যেতে পারবে বা পার পেয়ে যাবে, সেটি হবে না। আমরা সব সময় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি।

স্বর্ণগুলো চোররা কি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ফেলেছিল নাকি দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কিছু স্বর্ণ দোকানে রেখেছিল আবার কিছু স্বর্ণ তাদের কাছ থেকে জব্দ করেছি। তবে তারা বলেছে কিছু স্বর্ণ রাস্তায় পরে গেছে। তাদের কাছ থেকে আমরা ২০১ ভরি সোনা জব্দ করেছি। তাদের রিমান্ডে আমরা পেলে বাকি সোনা কোথায় আছে তা জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্ধারের চেষ্টা করব।

যেসব দোকানি চোরাই স্বর্ণ কেনেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব যদি আমাদের তদন্তে তাদের নাম আসে। এছাড়া বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবাইকে বলব যে, কেউ যেন চোরাই মাল না কেনেন। কেউ কিনে ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনেক দোকানি চোরাই সোনা কিনে গলিয়ে অন্য সোনা বানিয়ে ফেলেন। তদন্তে তাদের নাম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মার্কেটের কেউ চোরদের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও কারও নাম আমরা পাইনি, তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।