ঢাকা: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন বয়স্ক বন্দী (হাজতী) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে দেশে আবারও করোনা ঊর্ধ্বগতির কারণে কারা অধিদপ্তর থেকে দেশের সব কারাগারে চলমান স্বাস্থ্যবিধি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ আগের মতই সর্তকতা অবলম্বন করছে। কারাগারে কয়েক শত বয়স্ক বন্দী আছেন। তারা বিডিআর বিদ্রোহ মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাসহ অন্যান্য মামলায় আটক আছেন। কারাগারের অধিকাংশ বয়স্ক বন্দী বকুল, করোতোয়া ও বনফুল এই তিনটি ভবন আছেন। এ কারণে এই তিন ভবনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনুমানিক ১০ হাজার বন্দী আছে। কারারক্ষীসহ সব বন্দীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে ওই সূত্রটি আরও জানায়, যদিওবা বন্দীদের করোনার প্রতিরোধের জন্য প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সূত্রটি দাবি করেন, কারাগার থেকেও বন্দীদের ও কারারক্ষীদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়। কারাগারের ভেতরে হাত ধোয়ার জন্য একাধিক ব্যবস্থা আছে।
এছাড়া নতুন বন্দী যারা কারাগারে প্রবেশ করে, আগের মতই কারাগারের ভেতরে বনফুল ভবনে তাদের সাতদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরমধ্যে নতুন কোন বন্দীর করোনার উপসর্গ দেখা না দিলে পরে তাদেরকে অন্য ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, দেশে করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সরাসরি সাক্ষাৎ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যেটা এখন পর্যন্ত বলবৎ আছে। তবে গত বছর কয়েক দিনের জন্য সরাসরি সাক্ষাৎ চালু করা হলেও পরে আবার বন্ধ করা হয়। যা এখনও চলমান আছে। তবে স্বজনরা একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট দিনে বন্দীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, একজন বয়স্কবন্দীকে প্রথমে অন্য রোগের কারণে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে।
তিনি আরও জানান, দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম থেকেই কারাগারেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালানো হয়। সেটা এখনও বলবৎ আছে। যেমন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বজনদের সঙ্গে বন্দীদের সরাসরি সাক্ষাৎ বন্ধ। তবে মোবাইলে নির্দিষ্ট সময় কথা বলতে পারে। সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দেশে আবারও করোনা যেভাবে বাড়ছে তাতে কারাগারেও বরাবরের মতো সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বন্দীদের পাশাপাশি সবাই মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছে।
কারাগারে থাকা তিনটি ভবনে বয়স্ক বন্দীদের জন্য আলাদা সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বলেন, দেশে করানো আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আবার বাড়ার কারণে বুধবার (১২ জানয়ারি) দেশের ৬৮টি কারাগারের সব সিনিয়র জেল সুপারের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিং হয়েছে। সেখানে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চলমান স্বাস্থ্যবিধি যেন জোরদার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১জন বন্দী হাসপাতালে ভর্তির পরে তার করোনা পজিটিভ হয়েছে। তিনি বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
তিনি আরও বলেন, কোন কোন ইকুইটমেন্ট দ্রুত দরকার সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য দেশের ৬৮টি কারাগারে সব বন্দীকে টিকার প্রথম ডোজ আগেই সম্পন্ন হয়েছে। কোন কোন কারাগারে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯১৬ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশে। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সরকার বিভিন্ন দিক নির্দেশনা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে মাঠে থাকবে সরকারি লোকজন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, ১২ জানুয়ারি, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড