সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ার প্রাণ কেন্দ্র বাইপাইলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দখল করে মাছের আড়ৎ পরিচালনা করা হয়। এতে পোশাক কারখানায় কর্মরত মানুষসহ সাধারণ মানুষরা পড়ে চরম দুর্ভোগে।
আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য সম্প্রতি বাপাইলের পশ্চিম পাশ থেকে বাইপাইলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মাছের আড়ৎটি চলে আসায় মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। এ কারণে সকালে দূরপাল্লার পরিবহনগুলোকে নবীনগরে এসে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে বাইপাইল এলাকায় আশুলিয়া থানা মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতি মাছের আড়ৎ সামনে গিয়ে দেখা যায় এমন দুর্বিষহ অবস্থা।
আরও দেখা যায়, প্রায় অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে মহাসড়কের পাশে এই মাসের আড়ৎ। এতে সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারিদের উপচে পড়া ভিড় ভোর থেকেই থাকে। আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বাইপাইল আড়তে মাছ ট্রাকে ট্রাকে আনা হয়। এই ট্রাকগুলো থেকে মাছ নামাতে গিয়েই সকালে সড়কে পড়ে দীর্ঘ যানজট। কারণ আড়তের ভেতর ট্রাক থেকে মাছ নামানোর জায়গা নেই। তাই রাস্তার ভেতর পাশাপাশি করে ট্রাক চাপিয়ে মাছ নামান ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় এই মাছগুলো নিয়ে রাস্তার ভেতরেই দাঁড়িয়ে থেকে হাঁকডাক দেওয়া হয় বিক্রির জন্য।
আরও দেখা যায়, আড়তের পাশেই বড় একটি পোশাক কারখানা। সকালে মাছের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, অরক্ষিত হয়ে উঠছে মহাসড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া পথচারী পোশাক শ্রমিকদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
গাজিরচট থেকে প্রতিদিন সকালে কারখানায় যান মিনহাজ। রাস্তা দিয়ে যেতেই সকাল ৭টার দিকে তাকে ওই মাছের আড়তের যানজটে পড়তে হয়। তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকায় শিল্পাঞ্চল হওয়ায় প্রতিদিন সকালে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু মাছের দোকান ও ট্রাকের কারণে সকালে যানজট লেগেই থাকছে। তখন আমাদের কারখানায় যেতে সমস্যা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বাইপাইলের পশ্চিম পাশে ছিলাম ভালো ছিলাম। সেখানে মাছ নামানো জায়গা ছিল। এখন যেখানে এসেছি মাছ নামানোর জায়গা ঠিকঠাক মতো নেই। তাই বাধ্য হয়েই সড়কের উপর ট্রাক রেখে মাছ নামাতে হয়। এখন কি করবো ব্যবসা তো চালাতে হবে। আর সকাল বেলাই আমরা সব কাজ শেষ করি।
রাস্তায় বসে মাছ বিক্রি করছিলেন রবিন। তিনি বলেন, মাছটা মাত্রই ট্রাক থেকে নামিয়েছি। এখন এখানেই কাস্টমার ধরছে। তাই নিচে রেখেই মাছ তাকে দিচ্ছি।
প্রতিদিনের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে চায় স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন, আড়ৎ সবার জন্য ভালো। কিন্তু এই আড়ৎ এখন মানুষের গলার কাটার মত হয়ে গেছে। আড়ৎ তৈরি করেছে মাছ নামানোর ব্যবস্থাও করুক। মাছ নামাতে গিয়ে রাস্তার তিনভাগের দুইভাগই দখল করে ফেলে। এক ভাগ দিয়ে গাড়ি ও মানুষ কোনোমতে কষ্ট করে যায়।
বিষয়টি স্বীকার করে আশুলিয়া থানা মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতি মার্কেটের (বাইপাইল) সভাপতি ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, মার্কেটের পাশে একটি কাগজ কারখানা আছে। সেই কারখানার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা ৩০ তারিখের ভেতর ভেঙে নিয়ে যাবে। আমরা সেটাকেই পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করবো। আপাতত একটু কষ্ট করেই চলতে হচ্ছে। তবে দ্রুত এর সমধান করবো।
আড়ৎটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি কাজের জন্যই আমরা এখানে নতুন করে শুরু করেছি। একটু সমস্যা তো হচ্ছেই। সকাল দিকেই যখন আড়ৎ জমে তখন সমস্যাটা হয়। তবে আড়তের পেছনে জায়গায় বালি ফেলছি সেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল বাংলানিউজকে বলেন, আসলে বিষয়টি আমার জানা নেই। রাস্তা যেনো বন্ধ না করে সে ব্যবস্থা আমি নিবো। আমি আড়ৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।
সাভার ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই এডমিন) অফিসার আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আসলে দেখেন তারা ঘটনাটি ঘটায় সকাল দিকে। সেখানে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ থাকে। কিন্তু একজন সেখানে সামলাতে পারে না। আর আমাদের পক্ষের সেখানে একটি স্পেশাল দল দেওয়া সম্ভব না। তবে হাইওয়ে থানা পুলিশ চাইলে বিষয়টি পারে। তাদের সকালের টিম সেখানে গিয়ে দুই-এক ঘণ্টা সময় দিলেই হয়ে যাবে।
সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে সেই আড়তের সামনে কয়েকবার কয়েকটি গাড়ি রেকারিং করিয়েছি। আসলে সেখানে রেকার তো সেই ভাবে রাখা সম্ভব হয়না। তবুও আমরা সকালে চেষ্টা করি রাস্তা ফ্রি রাখার। আবার একটা বিষয় হলো একটি গাড়ি যদি আজ রেকার করে জরিমানা করা হয় সেই গাড়ি আর আসে না। নতুন করে আরেক গাড়ি আসে। তাই শক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে ট্রাফিক পুলিশ চাইলে বিষয়টি সমাধান করতে পারে তাদের নাকের ডগায় সকালে এসব ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এসএফ/এনটি