চাঁদপুর: দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুট। এই ফেরির চাঁদপুর অংশ হরিণা ফেরিঘাটটি নানা অনিয়মে এখন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
স্পেশালের নামে কিছু গাড়ি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সিরিয়াল ছাড়া পার হলেও সিরিয়ালে থাকতে হয় অপেক্ষমান নিয়মিত যানবাহনগুলো। চালকসহ যানবাহনগুলো শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে হরিণা পার্কিং ইয়ার্ডে এসে থাকেন আতঙ্কে। কারণ পুরো পার্কিং ইয়ার্ডটি অরক্ষিত। তবে এসব বিষয় তদারকি নেই ইজরাদারের। বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের জেলার অধিকাংশ মালামাল ও গণপরিবহন চলাচলের অন্যতম নৌরুট হচ্ছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর। পদ্মা-মেঘনা নদীর খরস্রোত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া এ রুটে ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর অংশ পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থা নিরাপদ থাকার কারণে যানবাহন চলাচল দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু ফেরির হরিণা অংশে পার্কিং ইয়ার্ডটি গত কয়েকবছর তত্ত্বাবধান না থাকায় ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাতের বেলা কোনো পাহারাদার নেই। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। ৪০০-৫০০ চালক ও হেলপারের জন্য একটি পানির চাপ কল এবং একটি পায়খানা। সীমানা প্রাচীর খোলা থাকায় রাতে ও দিনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চালকদের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগও নেই। বিশ্রামাগারগুলো মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
যানবাহন পারাপারের জন্য সাতটি ফেরি থাকলেও এসব ফেরি খুবই পুরনো। অনেকটা চলাচলের অযোগ্য ফেরি দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাহন নিয়ে চলছে পারপার। নদীতে ঢেউ কিংবা স্রোত বাড়লে যান্ত্রিক দুর্বল ফেরিগুলো বন্ধ করে রাখা হয়। যে কারণে প্রতিদিনই আলুবাজার ও হরিণা ঘাটে ৬০০-৮০০ গাড়ির দীর্ঘ লাইন থাকে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা চালক আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, হরিণা পার্কিং ইয়ার্ডটি পুরোই অরক্ষিত। রাতের বেলায় লাইট জ্বলে না। পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় সময় ছিনতাই হয়। সিরিয়াল ছাড়া গাড়ি পার হয়। চালক ও হেলপারদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা জরুরি।
খুলনার আরেকজন গাড়ি চালক রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ফেরি কম থাকায় দুই পাড়ে থাকে দীর্ঘ লাইন। ফেরিগুলো অনেক পুরনো। এসব ফেরিগুলো পরির্তন করা দরকার।
নোয়াখালীর গাড়ি চালক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার ইজারাদারের লোকজন আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করে। দিনের বেলায় গাড়ি পার হলেও রাতে একটি ট্রাকও পার হতে দেওয়া না। তারা ইচ্ছেমত টাকা নেয়। নিয়মের বাহিরে ২-৪ হাজার টাকা বেশি নিয়ে গাড়ি পার করে। রাতে এ ঘাটে একটা নৈরাজ্য চলে। মনে হয় এই ইজারাদারকে দেখার কেউ নেই। আমরা সরকারের কাছে এ ঘাটের শৃঙ্খলা আনার দাবি জানাই।
চালক জামাল হোসেন চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন যাবেন ভান্ডারিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হরিণাঘাটে এসেছি থাকতে হবে কমপক্ষে ৩ দিন। কিন্তু এখানে থাকার মতো সেই ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় আতঙ্কে থাকতে হয়। নেই টয়লেট ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এগুলো কর্তৃপক্ষের সমাধান করার দরকার।
অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইজারাদার মোজাম্মেল টিটু গাজীর প্রতিনিধি মো. জসিম উদ্দিন কোন বক্তব্য দিতে রাজিন হননি।
চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাট বিআইডাব্লিউটিসি ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আব্দুন নুর তুষার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নিয়মিত সাতটি ফেরি চলে। তবে সব ফেরির সাইজ একজ নয়। যে কারণে কম-বেশি বাহন নিয়ে পার হতে হয়। স্রোত থাকলে বন্ধ রাখা হয়। তবে আরো ফেরি দেয়া হলে তখন এই সমস্যা থাকবে না।
বিআইডাব্লিউটিএ চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা এ.কে.এম. কায়সারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হরিণাঘাটে যানবাহনের যেসব সমস্যা এসব নিরসনে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। রাতের আলোর জন্য কাজ করেছি। পানি ও টয়লেট ব্যবস্থা পরিষ্কার রাখার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনেক লোক প্রতিদিন টয়লেট ব্যবহার করে, যে জন্য পরিষ্কার রাখা খুবই দুরহ ব্যাপার। চালক ও যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য ইজারাদার শোকজ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এনটি