ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কেরানীগঞ্জে সায়মন হত্যা: ৩০ মিনিটের ‘মিশনে’ ছিলেন ৮ জন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২২
কেরানীগঞ্জে সায়মন হত্যা: ৩০ মিনিটের ‘মিশনে’ ছিলেন ৮ জন গ্রেফতার খুনি ‘গ্লাস সুমন’ ও চক্রের সদস্যরা

ঢাকা: ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে ‘গ্লাস কোম্পানি’ নামে ভয়ানক এক মাদক কারবারী চক্র। মূলহোতা সুমনের নেতৃত্বে এই চক্রতে আছে ১২-১৫ জন সক্রিয় সদস্য।

বেশ রমরমা ও অবাধে চলছিল তাদের মাদক কারবার।

এদিকে মাদকের ছোবল থেকে সমাজকে বাঁচাতে এই চক্র সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য দেন স্থানীয় সায়মন। এর প্রেক্ষিতে চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এতে ক্ষুব্ধ হন ‘গ্লাস কোম্পানি’ তথাপি মাদক চক্রের মূলহোতা সুমন। পরে পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে ও এলোপাতারি কুপিয়ে সায়মনকে খুন করে সুমনসহ তার ৮ সহযোগী।

কেরানীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সায়মন হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমনসহ পাঁচজনকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় সায়মন ওরফে নুরে আলমকে (২৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় নিহত সায়মনের ভাই মো. আরস আলম কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসাসির নামে একটি হত্যা মামলা (নং-১৪) দায়ের করেন।

এরপর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাব। রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাত থেকে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ভোর পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমন (২৯)-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১০। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ (২৮), শরীফ ওরফে গরীব (২৯), জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি (৩২) ও হারুন (৩২)। তাদের তথ্য অনুযায়ী উদ্ধার করা হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত সুইচগিয়ার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র।

এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, মাদক কারবারী চক্র গ্লাস কোম্পানির কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারের ঘটনায় সুমন ও তার সহযোগীরা ভিকটিম সায়মনকে সন্দেহ করে। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা সায়মনকে খুন করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-ব্যাগ

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে ভাগনা, বালুরচর মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে এলাকায় চক্রের মূলহোতা গ্লাস সুমন, লম্বু সোহাগ ওরফে ঘটি সোহাগসহ আরও কয়েকজন হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জানুয়ারি গ্লাস সুমন চক্র মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে সায়মনকে খুন করে। এ কাজে  গ্রেফতার হওয়া হারুন তথ্য দিয়ে খুনীদের সহযোগিতা করে।

তিনি আরও জানান, হারুনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুমন ও তার সহযোগীরা মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় সায়মনকে একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে জোরপূর্বক ধরে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। তারপর চেপে ধরে, হাত-পায়ের রগ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেয়। পরে এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়। কিলিং মিশনে সুমনের নেতৃত্বে ৭/৮ জন সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন আসামিরা।

খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, গ্লাস সুমন পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের সময় স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেই সায়মনের রগ কাটেন। এছাড়া গ্রেফতার লম্বু সোহাগ ও শরীফ গরীবুল্লাহ রগ কাটায় অংশ নিলে তখন জনি ও গ্লাস সুমন সায়মনকে চেপে ধরে রাখে।

তিনি বলেন, গ্লাস সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাই সংক্রান্ত ৫টি মামলা রয়েছে। সে আগে গ্লাসের দোকানে কাজ করতো এবং ভাঙা গ্লাস দিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ ও জখম করার কারণে এলাকায় গ্লাস সুমন হিসেবে পরিচিতি হয়ে ওঠে। এছাড়া লম্বু সোহাগ, জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি এবং হারুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।