ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতারণা করতেই সাংবাদিক সাজেন শিমুল 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২২
প্রতারণা করতেই সাংবাদিক সাজেন শিমুল 

ঢাকা: দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গাজীপুরের সালনায় বসবাস করছেন তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুল (৩২)। পড়াশোনায় সে ৮ম শ্রেণির গণ্ডি পার হতে না পারলেও সালনার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরির পাশাপাশি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চালায় প্রতারণা ও ধান্দা-ফিকির।

আব্দুল্লাহপুরে দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সংবাদকর্মী হিসেবে ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক শেখ শিমুল।

শুধু তাই নয়, নিজের পরিচয় গোপন করে ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে এপর্যন্ত চার জন নারীকে ভুয়া কাবিননামা দিয়ে বিয়ে করে তাদের সঙ্গেও প্রতারণা ও নির্যাতন করে আসছিলেন। এছাড়াও তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইত এই প্রতারক কথিত সাংবাদিক তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুল।

মঙ্গলবার (০১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল-মোমেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গাজীপুরের গাছা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারী প্রতারক তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুল (৩২)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। অভিযানে তার কাছ থেকে ২টি ভুয়া  সাংবাদিকের আইডি কার্ড, ২টি ভুয়া টিন সার্টিফিকেট, ১১টি ভুয়া প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড, ৩ প্রকার ভিজিটিং কার্ড, ১টি স্পাই ক্যামেরা, ৭ টি এটিএম কার্ড, ৬ টি চেক বই, ১ টি পে-অর্ডার, ১ টি বিবাহের হলফনামা, ১ টি ভুয়া জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ১ টি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত বেল্ট, ৪ টি পেনড্রাইভ, ২ টি মেমোরি কার্ড, ৬ টি মোবাইল ফোন এবং ৪১ টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।  

আব্দুল্লাহ আল-মোমেন বলেন, সবুজ ওরফে শেখ শিমুলের জন্মস্থান বাগেরহাট জেলায়। সে ১০ বছর ধরে গাজীপুরে বসবাস করছে। বর্তমানে গাজীপুরের সালনা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণির গণ্ডি পার হতে না পারলেও নিজেকে একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেন। পাশাপাশি সে ভুয়া দুটি প্রেস কার্ড তৈরি করে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।  
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শিমুল জানায়,  ২০০৫ সালে বাগেরহাটে নিজ এলাকায় ১ম বিয়ে করেন। পরে এক বছর সংসারের পর তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। ২০১২ সালে ২য় বিয়ে করলে তার ২য় স্ত্রীও ১ বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। বাগেরহাট থেকে গাজীপুরে এসে এবং একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। এপর ২০১৪ সালে একজন গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করেন। সে ২০১৮ সালে উত্তরখান মাজার তালতলা এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় তার ৩য় স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে সেখানে কর্মরত একজন গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক তৈরি করেন। পরে সে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় শারীরিক সর্ম্পক করে এবং শারীরিক সর্ম্পকের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় একজন মৌলভী সাহেবকে বাসায় ডেকে এনে মৌখিকভাবে ভুক্তভোগীকে বিয়ে করেন। ভুক্তভোগী বিয়ের কাবিননামা চেয়ে চাপ দিলে সে বিভিন্নভাবে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করে। শারীরিক সর্ম্পকের গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন এই প্রতারক শিমুল।

গ্রেফতার শিমুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।