ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রূপসা ঘাটে ট্রলার মাঝিদের নৈরাজ্য, যাত্রী ভোগান্তি

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
রূপসা ঘাটে ট্রলার মাঝিদের নৈরাজ্য, যাত্রী ভোগান্তি

খুলনা: হঠাৎ করে ৩ টাকার ট্রলার ভাড়া ৫টাকা করা হয়েছে। রাতে পারাপারের সময় ভাড়া বেশি চায়।

ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক নেয়। প্রতিবাদ করলে দুর্ব্যবহার করেন মাঝিরা। অথচ প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই।

আক্ষেপ করে শনিবার (১২ মার্চ) সকালে কথাগুলো বলছিলেন রূপসা ঘাট দিয়ে পারাপার হওয়া নিয়মিত যাত্রী আকাশ খান।

তিনি জানান, সরু গ্যাংওয়ে দিয়ে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে পন্টুনে যাতায়াত করেন। গ্যাংওয়ে নদীর ভাটার সময় মারাত্মক খাড়া হয়ে থাকে। এর কারণে বেশি কষ্ট হয় নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের। খাড়া গ্যাংওয়েতে মোটরসাইকেল ও মালবোঝাই ভ্যান ওঠানো-নামানো এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ যাত্রীদের এমন দুর্ভোগ হলেও দেখার কেউ নেই। বরং ঘাট থেকে পাড়া পাড়ের সময় একটি বড় ব্যাগ বা কোন মালামাল সঙ্গে নিলেই বাড়তি টাকা গুনতে হয় ট্রলারে ও টোলে।

জোবায়ের নামের অপর এক যাত্রী বলেন, রূপসা ঘাটে ট্রলার মাঝিরা নৈরাজ্য চালাচ্ছে কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।

মাহমুদ নামের এক যাত্রী জানান, ঘাটের এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করলে অনেক সময় যাত্রীদের অপমান হতে হয়। গায়ে হাতও তোলেন মাঝিরা। ট্রলারে ২০ জন যাত্রী নেওয়ার বিধান থাকলেও তা অনেকে মানছেন না। ইচ্ছামতো যাত্রী নিচ্ছেন। এতে চরম আশংকা ও আতংকের মধ্যে দিয়ে পার হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

যাত্রীদের অভিযোগ প্রতিদিন নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন তারা। নারী ও শিশু যাত্রীদের ধরে টানাটানি টোল আদায়কারী ও ট্রলার মাঝিদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে নারী যাত্রীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সরকারি-বেসরকারি, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়মিত এসব ভোগান্তির শিকার হলেও প্রতিকার মিলছে না। বিগত দিনে ঘাটে নৈরাজ্য তৈরি হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও এখন আর চোখে দেখা যায় না। আর এতে করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাঝি ও টোল আদায়কারীরা।

তারা আরও বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে পারাপারের জন্য এ ঘাটটির ওপর নির্ভর করতে হয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ঘাটের ট্রলার মাঝিরা। তাদের খামখেয়ালিপনায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তার ওপর হঠাৎ করে ৩ টাকার ভাড়া ৫টাকা হয়ে গেছে।

অনেকে বলছেন, আমাদের অনেকের মাসিক বেতন ৬-১০ হাজার টাকা। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে ঘাট পাড় হতেই ট্রলারে যেতে আসতে ১০টাকা ও টোলে ২টাকা মোট ১২ টাকা লাগে। তাহলে রূপসা নদীর ওপারে থাকা লোকজন কিভাবে ঘাট পার হয়ে শহরে এসে চাকরি করবে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ততম রূপসা ঘাটে ভাটার সময় পন্টুন থেকে ট্রলারে ওঠানামা করা খুবই কষ্টকর। অপেক্ষাকৃত খাড়া গ্যাংওয়ে থেকে পন্টুনে নামা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। অধিকাংশ ট্রলারের টাকা আদায়কারী ও চালক শিশু ও কিশোর।  

খুলনার রূপসা ঘাট ইঞ্জিন চালিত নৌকা মাঝি সংঘের সভাপতি রেজা বেপারি বাংলানিউজকে বলেন, দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নদী পাড় হওয়ার নৌকার ভাড়া বেড়েছে। এছাড়া আলকাতরা, তেল, কাঠ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। আগে বড় নৌকায় ৩৫ জন এবং ছোট নৌকায় ৩০ জন ছিল। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার আমরা তো আর চলতে পারছি না। এরপর সিদ্ধান্ত হল নৌকায় ২০ জন ৫টাকা করে চলবে। ২০ জন করে লোক নেওয়ার কারণে সবাই ভালো করেই পার হতে পারছে।

এ নিয়ম অনেকে মানেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় প্রশাসনের লোক ও স্থানীয় বখাটে ছেলেরা হুট হাট নৌকায় উঠে পরে। আবার পয়সা ছাড়া অনেকে ওঠে। এর কারণে বেশি হয়ে যায়। কিন্তু ২০ জনের বেশি একজনও নিলে নিয়ম আছে দুই দিন সাসপেন্ট করে রাখা হয় সেই নৌকাকে। সিটি কর্পোরেশনে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি ভাটার সময় পল্টন খাড়া হয়ে যায় লোকজন উঠতে নামতে পারে না। এখনও চিঠির উত্তর পাইনি। আমাদের ঘাটে ১৭৫ ট্রলার সদস্য রয়েছে। তবে ট্রলার আছে ১২০ টির মতো। এসব ট্রলার এক দিনে চলে না। দুই ভাগে ভাগ করা।  

রূপসা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো: সাজজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রূপসা ঘাটের ভাড়া বাড়ার বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে রোববার উত্থাপন করা হবে। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, মার্চ ১২ , ২০২২
এমআরএম/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।