ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘লিটন চৌধুরী সেতু’ হলেই স্বস্তি লক্ষাধিক মানুষের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
‘লিটন চৌধুরী সেতু’ হলেই স্বস্তি লক্ষাধিক মানুষের

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা শহরে যেতে পুরো একদিনের হিসেব করতে হয় উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে।

অথচ উপজেলা সদর থেকে তিনটি ইউনিয়নের দূরত্ব সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার।

কোনো কোনো এলাকা থেকে মাত্র পাঁচ/ছয় কিলোমিটারের পথ। অথচ বহমান আড়িয়াল খাঁ নদ এ দূরত্বকে বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণ। শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে শিবচর উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে শিরুয়াইল, নিলখী ও দত্তপাড়া ইউনিয়ন। বর্তমানে এ নদের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ দূর হবে তিন ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষের। তাই সেতুটি নিয়ে আড়িয়াল খাঁ পাড়ের জনগণের উৎসাহ ব্যাপক!

জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে নৌকা-ট্রলারে করে আড়িয়াল খাঁ পার হয়ে যোগাযোগ রক্ষা করা হয় উপজেলা সদরের সঙ্গে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদের পাড়ে অপেক্ষা করা, সন্ধ্যার পর পার হতে বিড়ম্বনা, শিবচর সদরের সঙ্গে যোগাযোগে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নসহ আশেপাশের এলাকার অসংখ্য মানুষকে। সম্প্রতি আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মাণাধীন ‘লিটন চৌধুরী’ সেতুটির কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পাল্টে যাবে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদ উপজেলার দত্তপাড়া, শিরুয়াইল ও নিলখী ইউনিয়নকে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যদিও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে সড়ক পথে উপজেলা সদরে পৌঁছানো যায়। তবে তাতে সময় এবং দূরত্ব বেড়ে যায় অনেক। আড়িয়াল খাঁ নদ পার হয়ে গেলে মাত্র ১৫ মিনিটেই উপজেলা শহরে পৌঁছানো যায়। নদ পার হলে উপজেলা সদর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে। আর মহাসড়ক ঘুরে গেলে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ! সেতু না থাকায় অল্প দূরত্বে নদ পার হতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। তবে মানুষের এ ভোগান্তি দূর হবে অচিরেই। আড়িয়াল খাঁ নদের উৎরাইল-শিবচর অংশে নির্মিত হচ্ছে ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু এবং সংযোগ সড়ক। বর্তমানে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে।

শিবচর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে ২০২২ সালের অক্টোবরের ২২ তারিখে। বর্তমানে সেতুটির নির্মাণ কাজ এগিয়েছে ৭৫ ভাগ। সেতু নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৪ টাকা এবং চুক্তিমূল্য ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘লিটন চৌধুরী সেতু’। ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটিতে স্প্যান সংখ্যা ১১টি এবং পিয়ার সংখ্যা ৯টি। সেতুটির পাইলের সংখ্যা ১২৩টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়কের (সংযোগ সড়ক) দৈর্ঘ্য ১.৫০ কিলোমিটার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘লিটন চৌধুরী’ নামের সেতুটির কাজ শেষ হলে শিবচর উপজেলা সদরের সঙ্গে শিরুয়াইল ইউনিয়নের উৎরাইল, সাদেকাবাদ, সিপাইকান্দি, শিরুয়াইলসহ অন্যান্য গ্রাম, নিলখী ইউনিয়ন এবং দত্তপাড়া ইউনিয়নের গুয়াগাছিয়া, মগড়া, শৈল্যা, তাজপুর, বাজেহারচরসহ অন্যান্য এলাকা এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল-দিঘিরপাড় এলাকার অসংখ্য মানুষের জন্য শিবচরে যাতায়াত সহজ হয়ে উঠবে। এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষের উপজেলা সদরে যাওয়ার দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।  

উৎরাইল মহিলা দাখিল মাদরাসার একাধিক শিক্ষক বলেন, আগে আড়িয়াল খাঁর অপর পারের এলাকা থেকে আমাদের মাদরাসায় অসংখ্য মেয়ে পড়তে আসত। কিন্তু নদী পার হওয়ার ভোগান্তি, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে ঝুঁকি বিবেচনা করে ইদানিং কমে গেছে ছাত্রীর সংখ্যা। সেতুটি নির্মাণ হলে নদীপাড়ের গ্রামের শিক্ষার্থীরা সহজেই এখানে এসে লেখাপড়া করতে পারবে।

শিরুয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুরাবউদ্দিন মাতুব্বর জানান, সেতুটি চালু হলে যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন হবে। শিবচরের সঙ্গে যাতায়াত সহজ হয়ে যাবে। এ এলাকার নানা ধরনের উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করিম বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদের লিটন চৌধুরী সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ এগিয়েছে ৭৫ ভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।