ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রবাসী তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
প্রবাসী তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর

ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিহাস যাতে বিকৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ করে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব এবং জাতীয় চার নেতা ও মুজিবনগর সরকারের ঐতিহাসিক ভূমিকা সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ইংরেজিতে তথ্যচিত্র নির্মাণ করবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিতরণের জন্য ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্যসহ মুক্তিযুদ্ধের ওপর লন্ডন হাইকমিশন কর্তৃক ইংরেজিতে পুস্তিকা প্রকাশের পরামর্শ দেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে অর্থবহ এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভরশীল ও বাঙালি জাতিকে আত্মমর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ৫১তম বার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের সরকারের অন্যতম সংগঠক, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, মুজিবনগর সরকার একটি অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক সরকার, যা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং ১০ এপ্রিল ১৯৭১-এ গৃহীত ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’-এর ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত হয়েছিল।

‘স্বাধীনতার ইশতেহার'কে মিনি-সংবিধান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের গাইড হিসেবে অভিহিত করে এ বিষয়ে গভীরভাবে জানার জন্য প্রবাসী তরুণ বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম স্বাগত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণকারী জাতীয় চার নেতা ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে কারাবাস থেকে মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালানো এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাসহ মুজিবনগর সরকারের ইতিহাসিক ভূমিকা তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে হাইকমিশনার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুজিবনগর সরকারকে সমর্থনকারী বিদেশি সরকার বিশেষ করে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং নেতৃস্থানীয় ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ যেমন মাইকেল বার্নস, এমপি, ব্রুস ডগলাস-ম্যান, এমপি, টবি জেসেল, এমপি, আর্থার বটমলি, এমপি, রেজিনাল প্রেন্টিস, এমপি, জেমস রামসডেন, এমপি এবং পিটার শোর, এমপি-র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
 
তিনি লন্ডন হাইকমিশনের পক্ষে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে ১০ এপ্রিল, ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্রের জনসেবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বীর প্রতীক ও ভারতের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, মুজিবনগর সরকার শুধু ‘স্বাধীনতার ইশতেহার'  গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধকে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের লক্ষেই পরিচালিত হয়নি, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যা নথিভুক্ত করারও পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা আজ ১৯৭১ সালের বাঙালি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকার যথাযথ ডকুমেন্টেশনের এবং আজকের বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাপ্তাহিক 'জয় বাংলা' এবং 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র'-এর সাংবাদিক হারুন হাবীব সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিশেষ করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র এবং রেডিও যেমন দূরদর্শন, আকাশবাণী এবং আনন্দবাজার পত্রিকা এবং টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সাংবাদিক, যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার খবর প্রচার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানান।

মুজিবনগর সরকারের আইনগত দিক তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা এবং মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার আইনগত ভিত্তি, যা বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের ছয় নম্বর তফসিলে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে গঠিত প্রবাসী স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতৃস্থানীয় সদস্য ও প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক।

ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে মুজিবনগর সরকারের শপথ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এতে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
টি আর/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।