ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রাম আদালতে হামলা-ভাঙচুর, বাবা-ছেলেসহ কারাগারে চার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
গ্রাম আদালতে হামলা-ভাঙচুর, বাবা-ছেলেসহ কারাগারে চার

বাগেরহাট: বাগেরহাটে গ্রাম আদালতের সালিশ বৈঠকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ একই পরিবারের চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

 

সোমবার (২০ জুন) বিকেলে বাগেরহাট চিফ জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক আবির পারভেজ তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।  

এর আগে সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ওই চারজনের নাম উল্লেখ করে বাগেরহাট সদর তানায় মামলা দায়ের করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহিতুর রহমান পল্টন।  

আটক দুই পুলিশ সদস্য হলেন- পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম, তার বাবা আর্মড পুলিশের এসআই ফারুক আহম্মেদ। অপর দুইজন হলেন- নাদিমের দুই ভাই মেহেদী ও ইব্রাহীম। কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম ঢাকার মিরপুর স্টাফ কলেজে কর্মরত এবং তার বাবা ফারুক আহম্মেদ খুলনার খানজাহান আলী সেতু টোল প্লাজায় আর্মড পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মেহেদী ও ইব্রাহীম দুজনই শিক্ষার্থী।

কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিতুর রহমান পল্টন বলেন, দুই বছর আগে কাড়াপাড়া গ্রামের মানিক শিকদারের মেয়ে হুমায়রা জান্নাতের সঙ্গে একই এলাকার ফারুক আহম্মেদের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিমের বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জেরে তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধ মীমাংসার জন্য নাদিমের মা ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে রোববার (১৯ জুন) গ্রাম্য আদালতের দিন ধার্য করা হয়। সেই অনুযায়ী এদিন বিকেলে সালিশ বৈঠকের জন্য সবাই হাজির হয়। সালিশের সময় নাদিম উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীর দিকে তেড়ে যায়। এসময় বাধা দিলে নাদিম ও তার ভাইয়েরা মারধর শুরু করে। এতে গ্রাম পুলিশের দফাদার লুৎফর রহমান, গ্রাম পুলিশ নয়ন ও ফরহাদ এবং স্থানীয় জাহাঙ্গীর আহত হন। এর মধ্যে দফাদার লুৎফুর এর মাথা ফেটে যাওয়ায় তাকে খুলনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাদিমের স্ত্রী হুমায়রা জান্নাত বলেন, আমার স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। আমি বাধা দিলেই আমাকে মারত। আমি অন্তঃসত্ত্বা হলে সে আমার বাচ্চা নষ্ট করতে বলে, রাজি না হওয়ায় এখন বাচ্চা অস্বীকার করছে। প্রায় এক বছর কোনো ভরণপোষণও দেয় না। এছাড়া বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য স্বামী-শাশুড়ি আমার ওপর নানাভাবে নির্যাতন করত। একপর্যায়ে টাকা না দেওয়ায় আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমার ২২ দিনের শিশু সন্তান রয়েছে। আশা করেছিলাম সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে সুখে শান্তিতে বসবাস করব। কিন্তু সালিশ বৈঠকে আমার পরিবার এমনকি স্থানীয়দের অপমান করেছে তারা।
হুমায়রার বাবা মানিক শিকদার বলেন, বিয়ের পর থেকেই বিশ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে চাপ প্রয়োগ করত নাদিম ও তার পরিবার। টাকা না দেওয়ায় মেয়ের ওপর প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত তারা। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে তার ২২ দিন বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সালিশ বৈঠকে এ ধরনের হামলা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু এবং কঠোর বিচার দাবি করি।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশের মধ্যে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার চারজনকে এদিন দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ