ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টিসিবির পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ চেয়ারম্যান-মেম্বারের নামে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২২
টিসিবির পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ চেয়ারম্যান-মেম্বারের নামে

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্যের (মেম্বার) যোগসাজশে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করে তা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সারা ইউনিয়েনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুরে টিসিবির মাধ্যমে তিন স্থানে ওই ইউনিয়নে পরিবার (ফ্যামিলী) কার্ডের পণ্য সামগ্রী বিতরণকালে সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

জানা যায়, দাইন্যা ইউনিয়নের তপন রায় নিয়মিত টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করেন। তবে তার নিজের বা পরিবারের কারো নামে নেই  ফ্যামিলি কার্ড। দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন স্বাক্ষরিত কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের শান্ত সোনা খোকন ও তালগাছি গ্রামের রোকেয়া খাতুন এবং দাইন্যা গ্রামের শাহজাহান মোল্লার কার্ড দিয়ে নিয়মিত পণ্য সংগ্রহ করে নিজস্ব গোডাউনে মজুদ করে রাখেন। একই গ্রামের স্বপন রায়ের কাছেও রয়েছে বেশ কয়েকটি কার্ড। এছাড়া আরকে ভাই দিলীপের নিজের নামে রয়েছে দুটি কার্ড।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন ও ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী এলাকার তপন রায় ও স্বপন রায়সহ কয়েক ব্যক্তির সহযোগিতায় অন্য ইউনিয়নের কার্ড ব্যবহার করে টিসিবি পণ্য সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো মজুদ করে কালোবাজের বিক্রি করেন। শুক্রবার এ নিয়ে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি প্রতিবাদ করেন। পরে এনিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদসহ কয়েক নেতার হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয়করণের ভিত্তিতে ওই ফ্যামিলি কার্ডগুলো বিতরণ করা হয়েছে। ফলে আবেদন করেও প্রকৃত হতদরিদ্ররা কার্ড না পেলেও স্থানীয় ধনী আর ব্যবসায়িদের অনেকেই পেয়েছেন কার্ড। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে তপন রায়ে কাছে কীভাবে কাকুয়া ইউনিয়নের তিন মুসলিম পরিবারের কার্ড ব্যবহার করে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী তাদের ওই কার্ড করে দিয়েছেন। তাদের আইডি কার্ডের পরিবর্তে ওই কার্ডগুলো তাদের দেওয়া হয়েছে। তবে সেগুলো সংগ্রহ করে মজুদ রাখার বিষয়ে অস্বীকার করেন।

দাইন্যা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর আবুল কালামের অভিযোগ, পরিবার কার্ডের আবেদন করার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। তবে তিনি এখনো কার্ড পাননি। ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় অন্য ইউনিয়নের ভোটার আইডি কার্ডে হিন্দু পরিবারগুলো পরিবার কার্ড পেয়েছে।

তবে দাইন্যা ইউনিয়নের ভোটার না হয়েও কীভাবে সেখানে পরিবার কার্ড হয়েছে তা জানেন না কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের শান্ত সোনা খোকন। তার ভোটার আইডি নম্বর ৬৪৪০০৭২২৭২ ও তালগাছি গ্রামের রোকেয়া খাতুন, ভোটার আইডি নম্বর ৫৯৭১৪৯৫২৫৩ এবং দাইন্যা গ্রামের শাজাহান মোল্লার ভোটার আইডি নম্বর ৫১৯৪৭১৫৯৮।

দাইন্যা ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী জানান, দলীয়করণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও পরিবার কার্ডের জন্য ইউনিয়নে আবেদন এসেছিল ১৮০০টি। তবে কার্ড এসেছে মাত্র ১৩৫৬টি। এ কারণেই অনেকের নামে কার্ড হয়নি।
অভিযুক্ত দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন জানান, পরিবার কার্ডের আবেদনের শুরু থেকেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অন্য ইউনিয়নের ভোটার আইডি থেকে তার ইউনিয়নে কিছু পরিবার কার্ড হয়েছে। তবে এগুলোতে কীভাবে স্বাক্ষর করলেন সে বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি। আর এসব পণ্য কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) রানুয়ারা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, নামের তালিকাগুলো ইউপি চেয়ারম্যানরা দিয়েছেন। এছাড়াও পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের দায়িত্ব তাদের। কেন, আর কীভাবে এটি হলো সে ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ২৬ জুন, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।