ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

গরু বেইচ্যা চালান উইটপো না, তাই ফিরত নিয়্যা যাইত্যাছি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
গরু বেইচ্যা চালান উইটপো না, তাই ফিরত নিয়্যা যাইত্যাছি

সিরাজগঞ্জ: দুপুর থেকে বিকেল পেরিয়ে গেল তবুও গ্রাহকদের সাড়া নেই। দু-একজন এলেও যে দাম বলেন, তা শুনে মাথায় যেন বাজ পড়ে।

মিলছে না ব্যাপারীর দেখাও। তাই বাধ্য হয়েই নিজের ষাঁড়টিকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন খামারি জহের আলী।

যেতে যেতে তিনি বলছিলেন, ৭৫ হাজার ট্যাহায় গরু কিন্যা ১০ মাসে ৫০ হাজার খরচা হরছি। হেই গরুর দাম কয় এক লাখ ট্যাহা। ওই দামে বেইচ্যা চালানই উইটপো না, তাই ফিরত নিয়্যা যাইত্যাচি।  

জহের আলীর মতো নুর আলম, আবুল কালাম, ছোরাব আলী, মানিক শেখসহ অনেকেই ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের ষাঁড়গুলো।  

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কান্দাপাড়া গরুর হাটের চিত্র ছিল এটি। যে স্বপ্ন নিয়ে খামারিরা গরু পালন করেছেন, হাটে আসার পর মনে হচ্ছে তাদের স্বপ্নে গুড়ে বালি পড়েছে।  

সরেজমিনে দেখা যায় জেলার সর্ববৃহৎ এ হাটটিতে হাজার হাজার গরু আমদানি হয়েছে। মূল হাট ছাড়িয়ে চারদিকের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েও গরু তোলা হয়েছে। প্রায় ৫শ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে গরুর হাটটি বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু এত গরুর আমদানি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।  

সাড়ে ৮ মণ ওজনের গরু হাটে তুলেছেন সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী গ্রামের মানিক সেখ। কালো রঙের ষাঁড়টি দেখতেও বেশ ভালো। দুই লাখ দাম হাঁকালেও ক্রেতারা বলছেন দেড় লাখ।  

মানিক বলেন, গত বছর গরুটি কিনেছিলাম ৭৫ হাজার টাকায়। এক বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন যে দাম বলছে তাতে চালানও আসছে না।  

ক্ষুদ্র সিমলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদ এ বছর দুটি গরু পালন করেছেন। এর মধ্যে ১৬ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে একটি বিক্রি করেছেন। বাকি গরু চালান দামেই বেঁচতে চান তিনি। কিন্তু গ্রাহক মিলছে না।  

একডালা গ্রামের হাসমত আলীর একটি ষাঁড় কিনে পালন করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে লাখেরও বেশি। কিন্তু গ্রাহকেরা দাম বলছেন ৮০/৮৫ হাজার টাকা।  

সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের, বিলধলী গ্রামের জুয়েল, শিবনাথপুর গ্রামের বাবলু, খোর্দ শিয়ালকোলের আলাউদ্দিনসহ একাধিক খামারি বলেন, এ বছর ষাঁড় পালন করে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। অনেকেই কিস্তির ওপর টাকা তুলে গরু পালন করেছেন লাভের আশায়। কিন্তু লাভ তো দূরে থাক মূলধনই ঘরে আসছে না তাদের।  

এদিকে হাটে আসা ক্রেতারা গরু কিনে সন্তুষ্ট। তাদের মধ্যে এক প্রকার উৎসবের আনন্দই লক্ষ্য করা গেছে। রহমতগঞ্জ এলাকার কবির খান নামে এক ব্যবসায়ী কোরবানির জন্য দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকায় তিনটি গরু কিনেছেন। একই এলাকার মনোয়ারুল ইসলাম ৮৭ হাজার টাকায় কিনেছেন একটি গরু। তারা সাশ্রয় দামেই গরু কিনেছেন বলে জানান।  

শহরের ভিক্টোরিয়া কোয়ার্টার এলাকার বালাম আক্তার ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় বিশাল আকৃতির একটি ষাঁড় কিনতে পেরে আনন্দিত। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা।  

সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের জেলহক ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় পছন্দ মতো ষাঁড় কিনতে পেরে বেজায় খুশি। উচ্ছ্বসিত বানিয়াগাঁতী এলাকার শাহাদতও। কথা হয় আব্দুল আলীম, সোহেল মণ্ডল, আফজাল হোসেন, সুরুতুজ্জামান আলীসহ অনেক ক্রেতার সঙ্গে। তারা সবাই সাশ্রয়ে গরু কিনতে পেরে খুশি। তবে খামারিদের লোকসান হওয়ার কথা শুনে ক্রেতাদের অনেকেই দুঃখ প্রকাশও করেন।

কান্দাপাড়া হাট কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মণ্ডল জানান, আগের হাটে এখানে দুই হাজারেরও বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। গত হাটের তুলনায় আজকের হাটে আমদানি দিগুণ হলেও তেমন গ্রাহক নেই। তারপরও তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার গরু বিক্রি হতে পারে।  

জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চাহিদার তুলনায় এক লাখেরও বেশি গরু উৎপাদন হয়েছে। এসব গরু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। কিন্তু করোনার পর বন্যার কারণে ব্যাপারীরা লোকসানের ভয়ে গরু নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না। এ কারণে খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।  

তিনি বলেন, জেলায় ৩১টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী পশুরহাটের মাধ্যমে গবাদিপশুগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। হাটে হাটে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকরা রয়েছেন। কোনো গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।