কক্সবাজার: ‘আকাশে ওড়ছে হেলিকপ্টার। আর সেই হেলিকপ্টার থেকে ফেলা হচ্ছে বোমা।
রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় এমন মনোভাব প্রকাশ করে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোররা। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাতে শেষ হয় এ আয়োজন।
অনেকেই বলছেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ৫ বছর পেরোলেও অনেক রোহিঙ্গা শিশুর মনে এখনো দাগ কাটে সেদিনের ভয়াবহ নির্যাতনের বীভৎসতা। আবার বিপর্যস্থতা কাটিয়ে ওঠা অনেক শিশুর আঁকা ফুল,পাখিসহ প্রকৃতির মনোরমদৃশ্য জানান দিচ্ছে তারা সেই ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা শিশু আবুল ওসমান বলে, আমি এঁকেছি মিয়ানমারে আমাদের বাড়ি-ঘর কী রকম ছিল, স্কুল কেমন ছিল। নির্যাতনের সময় আমরা কোন অবস্থায় ছিলাম।
নিজের আঁকা ছবি দেখিয়ে ওসমান বলেন, মিয়ানমার সেনারা আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু করলে আমরা নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছি, এমন সময় সেখানে তারা গুলি চালিয়েছেন। আর বাংলাদেশে পৌঁছানোর পরে বিজিবি এবং সরকার আমাদের কী করেছে তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমার ছবিতে। রোহিঙ্গা শিশু ইয়াসমিনের (১২) রং আর তুলি আঁছড়ে আল্পনায় ফুটে ওঠেছে শৈপ্লিক দৃশ্য। মেহেদি রাঙানো হাতে ইয়াসমিন আপনা মনে ছবি আঁকছে।
সে জানায়, ছবি আঁকতে তার খুব ভাল লাগে। তাই যা মনের এসেছে তাই সে আঁকার চেষ্টা করছে।
ইয়াসমিন বলে, ছবিতে মনের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
শুধু ওসমান নয়, বেশির ভাগ শিশুর আঁকা ছবিতে স্থান পেয়েছে সেই দিনের ভয়াবহতা। আবার ইয়াসমিনের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে শিশুর সংখ্যাও আছে অসংখ্য।
এনায়েত বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি ক্যাম্পের শিশুরা ভালো ছবি আঁকে। তাদের জন্য এ ধরনের আয়োজন করা গেলে তারা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে। পাশাপাশি দক্ষতা বাড়বে।
৮ এপিবিএনের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানিয়ে এনায়েত বলেন, বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা শিশুরা এ রকম প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে তারা কল্পনায়ও ভাবেনি। যা মিয়ানমারে থাকতে সম্ভব হয়নি, এখানে সরকারের সদিচ্ছার কারণে অনেক প্রশংসনীয় কাজ এখানে এখন হচ্ছে।
‘এ ধরনের আয়োজন রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের মনে সুদূর প্রসারি প্রভাব ফেলবে। এতে তারা মন্দ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে বলে যোগ করেন এনায়েত।
৮ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান জানান, দেশের অন্যান্য জায়গা আর রোহিঙ্গা শিবিরের পুলিশিং কার্যক্রম এক নয়। আমরা এখানে মানবিক পুলিশিং চর্চা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা চাই খারাপকে বর্জন করে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোররা ভালো ও সৃজনশীল কাজের দিকে ধাবিত হোক। এতে করে শিবিরগুলোতে অপরাধ প্রবণতা কমবে।
১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে কক্সবাজারে উখিয়ার ১৯ নম্বর তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা শিবিরের পুলিশ ক্যাম্প মাঠে ‘ঘুড়ি উৎসবের’ আয়োজন করে ৮ এপিবিএন। যে আয়োজনের শতাধিক রোহিঙ্গা শিশু রং-বেরংয়ের ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠে।
৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের পুলিশ সুপার সিহাব কায়সার খাঁন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, খন্দকার আশফাকুজ্জামান, মো. কামরান হোসেন, সাংবাদিক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, সুনীল বড়ুয়া, তরুণ রোহিঙ্গা চিত্রশিল্পী এনায়েত খান প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা ও মো. জানানল উদ্দিন ভূইয়া।
বাংলাধদশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
এসবি/এএটি