ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ, কার্যকরি ব্যবস্থায় গড়িমসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ, কার্যকরি ব্যবস্থায় গড়িমসি প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার

ধামরাই, (ঢাকা) : ধামরাইয়ের যাদবপুর বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ১৯৫৭ সালে শুধু স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হলেও ২০১৮ সালে সংযুক্ত হয় কলেজ শাখা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আলী হায়দার। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো হলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে পাড়াড়সম অভিযোগ।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের (এমপিও) জন্য তদবিরের কথা বলে সহকর্মী শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, শিক্ষকদের বেতন আত্মসাৎ, বিভিন্ন খাতের টাকা মেরে খাওয়া। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মারধর ও স্কুলের কথা বলে লাখ টাকার গিফট নিয়ে অর্থ পরিশোধ না করারও অভিযোগ আছে আলী হায়দারের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ একত্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরও আলী হায়দারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হলেও অজানা কোনো ক্ষমতার হস্তক্ষেপের কারণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসির অভিযোগও উঠেছে।

অভিভাবকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক আলী হায়দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব হোসেন যাদবপুর বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে আলী হায়দারের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই মাসে ইউএনও বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। ওই শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতিকে নির্দেশ দেন ইউএনও। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

ইউএনওর নির্দেশ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদনে ১২ এপ্রিল তিন-চারজন শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণে তদবিরের জন্য তিনি বিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ক্যানটিন ইজারা দিয়ে তিন লাখ টাকা এবং লেবু বাগান ইজারা দিয়ে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন আলী হায়দার। এ অর্থ প্রতিষ্ঠানের আয় রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ না করায় তা আত্মসাৎ বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাব–নিকাশে ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেছে। শিক্ষক–কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণও করেন আলী হায়দার। সার্বিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সোমবার (২৯ আগস্ট) অভিযোগকারী সোহরাব হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে অন্যায় আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও কেন এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে জানতে পেরেছি, ওই শিক্ষকের ওপর মহলে অনেক লোক আছে।

দুই বছর আগে ধামরাইয়ের খান গিফট কর্নার থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বাকিতে স্কুলের জন্য গিফট কেনেন আলী হায়দার। সেই টাকা না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন খান গিফট কর্নারের মালিক ওয়াদুদ খান।

স্কুলটির গভর্নিং বডির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, প্রথমে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেই প্রতিবেদনে ইউএনওর নির্দেশে ৭ আগস্ট প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক জবাব দিয়েছেন। তার লিখিত জবাব ইউএনওর কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক ও একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একতরফা তদন্ত করেছেন। ২০১৫ সালের দিকে তৎকালীন সভাপতিকে শিক্ষকরা টাকা দিয়েছিলেন। তিনি মারা গেছেন। এরপরও নয়জনের টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে আদায় করে দিয়েছি। আমি প্রতিষ্ঠানের ক্যানটিন ও লেবু বাগান ইজারা দেওয়ার টাকাও আত্মসাৎ করিনি। করোনাকালে দেশের সব প্রতিষ্ঠানেই বেতন বন্ধ ছিল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের আয় ছিল না, তাই বেতন দেওয়া হয়নি। টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না।

অথচ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানিয়েছেন, করোনাকালীন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকলেও ওই সময়ের বেতন প্রতিষ্ঠান খোলার পর নেওয়া হয়েছে। বেতন দেওয়ার কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে তদবিরের জন্য নেওয়া টাকা নয়জনকে ফেরত দেননি আলী হায়দার। এ ছাড়া করোনার সময় শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মকর্তার ১১ মাসের বেতন প্রায় ২৪ থেকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

ধামরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আশরাফী বলেন, সব প্রক্রিয়া মেনে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। আমরা প্রতিবেদন জমাও দিয়েছি।

প্রতিবেদন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। যা সত্য তাই তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে ধামরাইয়ের ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির কাছে লিখিত জবাব দিয়েছেন। সেটি জানানো হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও (ডিজি) জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, ২৯ আগস্ট, ২০২২
এসএফ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।