ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রপ্তানির তৈরি পোশাক মাঝপথে চুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
রপ্তানির তৈরি পোশাক মাঝপথে চুরি

ঢাকা: ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানির জন্য কাভার্ডভ্যানে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। পথে চালকের যোগসাজশে প্রায়ই ৩০-৪০ ভাগ পণ্য চুরি হয়ে যাচ্ছিল।

এভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতি বছর প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের তৈরি পোশাক চুরি হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে গার্মেন্টস মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে পুরো পোশাকখাত।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানাধীন বেলতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪।

গ্রেফতাররা হলেন—হিমেল ওরফে দুলাল (৩৮), আবুল কালাম (৪০), মো. মহসিন আলী ওরফে বাবু (৩১) এবং মো. আলামিন (৩০)।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে র‌্যাব-৪ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি জানান, গত বছরের ১৪ আগস্ট আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস মালামাল রপ্তানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নেওয়ার পথে কিছু মালামাল উধাও হয়ে যায়। বিষয়টি ছায়া তদন্তের ধারাবাহিকতায় চক্রের মূলহোতা সিরাজুলসহ ৬ জনকে প্রায় ৬ কোটি টাকার গার্মেন্টস সামগ্রীসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। সিরাজুল গত তিন মাস আগে জামিনে বেরিয়ে আবারও একই কার্যক্রম শুরু করে।

এর ধারাবাহিকতায় বুধবার কুমিল্লা থেকে এই চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এ সময় ঘটনাস্থল থেকে চালকসহ ৩-৪ জন পালিয়ে যান। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া চার কোটি টাকার পণ্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের বলে শনাক্ত করেছে।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির গার্মেন্টস মালামাল চুরির ঘটনার সাথে জড়িত। মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের যোগসাজশে কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য চুরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে আসছিল। এমন কয়েকটি চক্রের হাতে প্রতি বছর প্রায় শত কোটি টাকার পোশাক চুরি হয়ে যাচ্ছে।

যেভাবে চুরি
চক্রটি সাধারণত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভারের সঙ্গে সখ্য গড়ে অর্থের লোভ দেখিয়ে চুরিতে রাজি করাতো। তারপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নির্জন এলাকায় কাভার্ডভ্যান পার্কিং করাতো। সিরাজুলের নির্দেশে গ্রেফতার হিমেল, আবুল কালাম, মহসিন ও আলামিন এবং পলাতক নুর জামানসহ কয়েকজন মিলে বিশেষ কৌশলে চুরি করতো।

তারা সাধারণত কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টন থেকে ৩০-৪০ ভাগ পণ্য নামিয়ে ফেলতো। এরপর কার্টন সঠিকভাবে বাঁধাই করে দিতো যাতে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কেউই সন্দেহ না করে।

কার্টনের মালামালের ওজন ঠিক রাখতে চুরি করা মালমালের সমপরিমাণ ঝুট কার্টনের ভেতরে দিয়ে দেওয়া হতো। এর ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওজন মেশিনে কোনো ধরনের অনিয়ম ধরা পড়তো না।

স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশি গার্মেন্টস মালামালের চাহিদা ব্যাপক থাকায় এবং মালামালের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় মূলহোতা সিরাজুল ও তার সহযোগী নুর জামান এবং গ্রেফতার হিমেল খুব দ্রুততম সময়ে তা বিক্রি করে অর্থ প্রত্যেককে ভাগ করে দেন।

ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে
মালামাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া ফ্যাক্টরি মালিকের দায়িত্ব। তাই মালামাল চুরি যাওয়ার কারণে ফ্যাক্টরি মালিকদের আবার মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাতে সময় ও অর্থের প্রচুর ক্ষতি হয়। এদিকে বিদেশি ক্রেতা সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে মালামাল না পাওয়ার কারণে তারা মূল্য পরিশোধ করতো না এবং পরবর্তীতে ক্রয় আদেশ দিতো না।

ফলে দিন দিন দেশের গার্মেন্টস সেক্টর প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হয়ে আসছে। এর ফলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের ঘাটতি দেখা যায় এবং দিন দিন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের মাধ্যমে দেশের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু মালামাল চোরাই পথে বিক্রির কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে বহিঃবির্শ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

২০২০ সালের শুরুতে এই চোরচক্রের মূলহোতা সিরাজুলের সঙ্গে পরিচয় হয় গ্রেফতার হিমেলের। পরিচয়ের সুবাদে এই চোরচক্রের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিলেন তিনি। চুরির টাকায় একটি কাভার্ডভ্যান কিনেছেন। এছাড়া, ঢাকা ও ভোলাতে তার একাধিক বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। পলাতক সিরাজেরও ঢাকাতে একাধিক বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে।

গ্রেফতার আবু কালাম কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলতে পারদর্শী। তিনি প্রতি চুরিতে লক্ষাধিক টাকার ভাগ পেতেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২২
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।