নওগাঁ: আগস্ট মাসের ১৪ তারিখ সন্ধ্যা। নওগাঁ সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের সিঁড়ির নিচ থেকে উদ্ধার হয় একটি নবজাতক।
তবে শিশুর মায়ের পরিচয় মিললেও, পাওয়া যায়নি তার বাবার পরিচয়। শিশুটির পিতৃত্বের পরিচয় জানতে কথা হয় শিশুর মা সুমির সঙ্গে। সুমির হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ, বর্তমানে তিনি একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন।
সুমি বাংলানিউজকে জানান, জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়া সবই এই নওগাঁ শহরে। মায়ের সঙ্গে থাকত শহরের এক ভাড়া বাসায়। প্রায় ২ বছর আগে শহরের মিন্টু নামে এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয় সুমির। এরপর মিন্টু নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে সুমির সঙ্গে একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক করেন। বিয়ে করবে বলে বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতিও দেয় মিন্টু। কিন্তু এর মধ্যে সুমির পেটে সন্তান আসবার পর থেকেই ফাটল ধরে ভালোবাসায়। অনেকভাবে চাপ দিয়েও সম্পর্ক মেনে নেননি মিন্টু।
সুমি আরও জানান, মিন্টু যে বিবাহিত এটা তার জানা ছিল না। শহরের দয়ালের মোড়ে তার একটা মুদি ও ফ্লেক্সি লোডের দোকান রয়েছে। মূলত দোকানে যাওয়া আসার মধ্যে দিয়েই তাদের সম্পর্ক হয়। এর মধ্যে সুমিকে বেশ কয়েকবার মিন্টু তার বাসা এবং বোনের বাসায় নিয়েও যায়। এলাকার প্রায় মানুষ তাদের একসঙ্গে চলাফেরা করতে দেখেছে। কিন্তু সন্তান পেটে আসার পর থেকে মিন্টু তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ সুমির। অনেক চেষ্টা করেও সন্তান নষ্ট করতে পারেনি সুমি। তাই সমাজে মুখ দেখানোর লজ্জায়, বাধ্য হয়ে সন্তান প্রসবের পরে হাসপাতালের সিঁড়িতে রেখে চলে যায় সুমি। তবে নিজের সন্তানকে ফেলে রেখে গিয়ে থাকতে পারেনি সে। তাই সব কিছু ভুলে সন্তানের খোঁজে হাসপাতালে আসে সুমি।
কথা হয় সুমির মা আনোয়ারার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে মা-মেয়ের সংসার চলত। সুমির বাবা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। এরপর থেকে মা-মেয়ে একসঙ্গে বসবাস করতেন। তবে মেয়ের এই সম্পর্কের কথা জানতেন না তিনি। যখন সুমির পেটে সন্তান আসে তখন বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি। এরপর বেশ কয়েকবার মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগও করেন আনোয়ারা। কিন্তু মিন্টু এসব বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেনি৷ উল্ট সব কিছু অস্বীকার করে সে। এরপর সুমির সন্তান প্রসবের পরে দুর্বিসহ জীবন কাটছে মা-মেয়ের। এদিকে ঘটনা জানাজানির হবার পর ভাড়া বাসা থেকে বের করে দিয়েছে তাদের।
সুমির এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় মিন্টুর সঙ্গে। মিন্টু মোবাইলে বাংলানিউজকে জানান, সুমির এমন অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। সে আমার দোকানে আসত এভাবেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। এর বাহিরে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সুমি যে কেনো আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে এটা ঠিক আমার জানা নেই বলেও জানান মিন্টু।
সুমি যাতে করে তার সন্তানের পিতৃ পরিচয় পায় এ বিষয়ে আইনি কি প্রক্রিয়া রয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হয় নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহশীন রেজার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন সুমির পরিবার। মামলা হওয়ার পরে পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট এর মধ্য দিয়ে তাদের পরিচয় পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে জেলা সমাজসেবা অফিস বলছে, এরই মধ্যে শিশুটির পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সামনে আরও সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
আরএ