ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের নামে নগর ভবনে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ উড়োচিঠি নিয়ে হুলস্থূল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের নামে নগর ভবনে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ উড়োচিঠি নিয়ে হুলস্থূল

রাজশাহী: রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নামে সিটি মেয়রের দপ্তরে কে বা কারা ‘উড়োচিঠি’ পাঠিয়েছে। চিঠির ভাষায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন।

বিষয়টি গড়িয়েছে দুটি মন্ত্রণালয়ে। এ ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠানো হয়েছে বোর্ডে। এতে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠির ব্যাপারে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়।

পরে চিঠির জবাবও দেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। নিজের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নগর ভবনে পাঠানো চিঠিটি ভুয়া। কে বা কারা তার নাম ব্যবহার করে সিটি মেয়রের দপ্তরে উড়োচিঠিটি পাঠিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে প্রকৃত কারণ জানতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনিও।

অভিযোগ উঠেছে, গত ১৮ জুলাই চিঠিটি রাজশাহী নগর ভবনে গিয়ে পৌঁছায়। এতে সিটি মেয়র বরাবর লেখা হয়েছে- ‘আপনার সঙ্গে আমাকে দেখা করার জন্য গেটে অপেক্ষা করতে হবে? আপনার কাছে সময় চাইতে হবে? বিষয়টি কল্পনা করা আমার জন্য দুরূহ। আপনি জানেন কী আমার জা শাশুড়ি এমপি? আমার আওয়ামী পরিবারে জন্ম। ভবিষ্যতে আমিও এমপি বা মন্ত্রী হতে পারি। গাজীপুরের ও কাটাখালীর মেয়রের দিকে তাকান। বর্তমানে তাদের কি অবস্থা?’

এ চিঠি পাওয়ার পর সেটির অনুলিপিসহ রাজশাহী সিটি করপোরেশন বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানায়। পরে গত ২৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়- মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। তাছাড়া তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় সরকারি কর্মচারীর নিকট থেকে এ ধরনের পত্র অবলোকন করেননি। অত্যন্ত সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতি উদাসীন এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে এমন পত্র লেখন চরম অসাদচরণ মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়/আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়।

এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ গত ২২ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের কাছে ব্যাখ্যা চান। চিঠিতে ১০ দিনের মধ্যেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এরইমধ্যে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর আগে সিটি করপোরেশন থেকে চেয়ারম্যানের কাছে এই চিঠির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই চেয়ারম্যান চিঠি দিয়ে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকেও উড়োচিঠির বিষয়টি অবহিত করেছেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. হাবিবুর রহমানের অনুরূপ (জাল/স্ক্যান) স্বাক্ষরে একটি আপত্তিকর পত্র রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। চিঠিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোনো স্বারক নম্বর ব্যবহার করা হয়নি। চিঠিটি উপশহর পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট করা হয়েছে, যা মেয়রের দপ্তর থেকে বোর্ড চেয়ারম্যান জেনেছেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সমস্ত অফিসিয়াল চিঠি বোর্ড সংলগ্ন জি.পি.ও-৬০০০ থেকে পোস্ট করা হয়। চিঠিটিতে যে ধরণের প্যাড এবং ফরমেট ব্যবহার করা হয়েছে তা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোনো দাপ্তরিক পত্রে ব্যবহার করা হয় না। মেয়রের কাছে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য কে বা কারা এই স্মারকবিহীন পত্রটি উপশহর পোস্ট অফিসে পোস্ট করেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বিব্রত এবং তা তদন্তের দাবি রাখে। ওই চিঠির সঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কোনরূপ সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানানো হয়।

জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যে ভাষায় চিঠি দেওয়া হয়েছে সেটা খুবই খারাপ। কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ এই চিঠি লেখার কথা না। কে বা কারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সিটি মেয়র এবং তার মধ্যেকার সম্পর্ক নষ্ট করতেই এমন ঘৃণ্য কাজটি করেছেন। এর তদন্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি করেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান।

এদিকে, ওই চিঠিটি ভুয়া আখ্যায়িত করে বোর্ড চেয়ারম্যান সিটি করপোরেশনকে যে চিঠি দিয়েছেন তার একটি অনুলিপি তদন্তের জন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখায়ও (ডিবি) দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, চিঠির অনুলিপি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু অনুলিপি নিয়ে তদন্তে সুযোগ নেই। সরাসরি অভিযোগ করলে তারা বিষয়টি দেখবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।