বরিশাল: বরিশালে ৩ মাস ১০ দিনের শিশু জুবায়ের আহম্মেদকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত মা পলি বেগমকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। ঘটনার সময় অভিযুক্ত মা পলি বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে আদালত এ রায় দেন।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম রাশেদুজ্জান রাজা এ রায় ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল খালেক মনা।
মামলার এজাহার ও আইনজীবি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাগির হোসেন তালুকদারের সঙ্গে ১৬ বছর আগে বিয়ে হয় অভিযুক্ত পলি বেগমের। এরপর তাদের ঘরে মোট ৩ ছেলে সন্তারের জন্ম হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে ছোট জুবায়ের আহম্মেদে জন্ম হয় ২০২১ সালে। ছোট ছেলের জন্মের আগে থেকেই অভিযুক্ত পলি বেগম সংসারে মানসিক ভাবে অশান্তি শুরু করেন। এছাড়া স্বামী সাগির হোসেনকে অসংলঘ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। জুবায়ের আহম্মেদের জন্মের পর অভিযুক্ত পলি বেগম আরও মানসিক ভাবে ভেঙে পরেন। এছাড়া ছোট ছেলে জুবায়ের আহম্মেদকে কখনও বালিশ চাপা দিয়ে কখনও গলা টিপে হত্যার চেষ্টা চালাতেন। এলাকার সবার কাছে বলতেন তার বড় দুই ছেলেকে হত্যার জন্য ছোট ছেলের জন্ম হয়েছে। ফলে পরিবারের সবাই ছোট ছেলে জুবায়েরকে চোখে চোখে রাখতো।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঘটনার দিন রাতে অভিযুক্ত পলি বেগম তার স্বামী সাগির হোসেন তালুকদার ও ছোট ছেলে জুবায়ের একসঙ্গে খাটে ঘুমিয়ে ছিলো। মাঝরাতে হঠাৎ ছোট ছেলে জুবায়ের ও স্ত্রী অভিযুক্ত পলি বেগমকে না পেয়ে খোঁজ শুরু করেন সাগির হোসেন ও তার পরিবার।
খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ৩ মাস ১০ দিনের শিশু জুবায়ের আহম্মেদকে গোয়াল ঘরের পানিভর্তি বালতির মধ্যে মাথা নিচে ও পা উপরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এরপর অনেক খোঁজাখুজির পরও অভিযুক্ত পলি বেগমকে না পেয়ে পরে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা করেন শিশু জুবায়ের বাবা সাগির হোসেন তালুকদার।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গৌরনদী মডেল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন চলতি বছরের ৩১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল খালেক মনা জানান, আসামি পলি বেগমকে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি জেলেহাজতে ছিলেন। অভিযুক্ত পলি বেগম শিশু জুবায় হত্যার ঘটনার আগে থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। আদালতে এ বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আদলত আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে প্রায় দেড় বছর মামলা চলার পর আদালত এ রায় দেন।
তিনি আরও জানান, এ মামলার আসামি ও বাদির সংসার এখনও ভাঙেনি। বর্তমানে আসামি পলি বেগম মনরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তপন কুমার সহার তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন। তবে কিছুটা সুস্থ হওয়াতে তিনি আবারও স্বামী সাগির হোসেন তালুকদারের বাড়িতে ফিরবেন। এই রায়ে আসামি ও বাদিপক্ষ খুশি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
এমএস/এসএ