ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত, ওসির প্রত্যাহার চেয়ে থানা ঘেরাও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
রাজশাহীতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত, ওসির প্রত্যাহার চেয়ে থানা ঘেরাও

রাজশাহী: রাজশাহীতে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের সামনেই একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাংবাদিকরা থানা ঘেরাও করেছেন।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় সাংবাদিকরা রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানা ঘেরাও করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও তারা থানার সামনে রাস্তায় বসেছিলেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমানের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সকালে রাজপাড়া থানার অদূরে ‘হোটেল এক্স’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান। এই হোটেলে দুটি কোচিং সেন্টার রাজশাহীর সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিল। সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এই আবাসিক হোটেলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হলো—  সেই বিষয়ে একজন অভিভাবক সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে ফোন করে জানালে তিনি তা দেখতে যান।

এ সময় তিনি দেখেন, হোটেলের দোতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচগানের অনুষ্ঠান চলছে। সাংবাদিক আনিসুজ্জামান এর একটি ছবি নিয়ে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা তাকে আটকে রাখে। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে ফোন থেকে ছবি ডিলিট করার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপনসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক।

তারা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে হোটেল থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা আবারও পুলিশের সামনেই সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পুলিশ তখন নির্বিকার ছিল। এ সময় ওই এলাকার এক ব্যক্তিকে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। পুলিশের সামনেই ফোন করে আরও কয়েকজনকে অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ডাকতেও দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে।

এ সময় সাংবাদিকরা হোটেলের এক্সের সামনে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্তদের আটকের দাবি জানালে পুলিশ দুজনকে থানায় নেয়। এরপর আইনি ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করার পাশাপাশি উল্টো হোটেল এক্সের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন রাজপাড়া থানার ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান।

পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তৌহিদুল আরিফের সামনেই ওসি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সাংবাদিকরা অভিযোগ তোলেন, ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান হোটেল এক্স থেকে অবৈধ সুবিধা নেন বলে ওই হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। তিনি শুক্রবারের এই ঘটনার পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন। তিনি রাজপাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি থানায় থাকার জন্য যোগ্য নন। তিনি যোগ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেদিনই এই ওসিকে প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। কারণ, তিনি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম জানান, সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচির কথা তিনি জেনেছেন। পরিস্থিতি দেখতে তিনি থানায় যাচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এসএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।