ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

বিজয় দিবসে দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের ডাক নিউইয়র্কে

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩
বিজয় দিবসে দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের ডাক নিউইয়র্কে

নিউইয়র্ক: “আজ আর বিমূঢ় আস্ফালন নয় / দিগন্তে প্রত্যাসন্ন সর্বনাশের ঝড় / তা যদি না হয় বিপদ নামুক ভয়ঙ্কর / তা যদি নাহয় ঝড় বন্যায় ভাঙ্গুক ঘর / তা যদি না হয় বুঝবো তুমিতো মানুষ নও / গোপনে গোপনে দেশদ্রোহীর পতাকা বও” মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠে সুকান্তের এই ক্ষুব্ধ প্রতিবাদের ভাষায় সহিংস রাজনীতি চিরতরে বন্ধের আহবান নিয়ে এবারে প্রবাসে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে  নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতার সময়ে  ‘প্রগতির পথে বাংলাদেশ , বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন’ শ্লোগানে এবারে মহান বিজয় দিবস পালন করছে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশন ।

নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসে  যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ, গনজাগরণ মঞ্চ ও জামাইকাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরে উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপন হয়েছে যথাযথ মর্যাদায়।

বাংলাদেশ মিশনে বিজয় দিবসের  আলোচনা অনুষ্ঠানে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ.কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ধর্মান্ধ অপশক্তির হাতে তুলে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আজ ৭১’র ঘাতকদের যখন বিচারিক কার্যক্রম চুড়ান্ত পর্যায়ে তখন নানা অজুহাতে, দেশের মানুষকে জিম্মি করে ঘাতকদের রক্ষার পায়তারা হচ্ছে। অবরোধের নামে গাড়িতে আগুন দিয়ে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে।

‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ’৭১ এর মত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ’৭১ এ আমরা প্রথম বিজয় অর্জন করেছিলাম আর এবার স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দ্বিতীয়বার বিজয়ের সূচনা  করেছি সকল অপশক্তি নির্মূলের শুরুর মাধ্যমে।

মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে গোলাম মোস্তফা খান মেহরাজ স্বাধীনতার এ মাসে  দেশব্যাপী আন্দোলনের নামে স্বাধীনতা  বিরোধীদের হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৭১ এর পরাজিত  রাজাকার আলবদর আল সামস‘রা প্রতিশোধ নিতে নতুন ষড়যন্ত্রে ধর্মের নামে আবারো ৭১এর মতই হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে।    
শহীদের রক্তে কেনা অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় এবং অস্তিত্বের প্রশ্নেই কাল বিলম্ব না করে  ঐক্যদ্ধভাবে এদের নির্মূলের কোন বিকল্প নেই। তিনি সুকান্তের চরন “লক্ষ লক্ষ প্রাণের দাম/অনেক দিয়েছি উজাড় গ্রাম/সুদে আসলে আজি তাই /যুদ্ধ শেষে প্রাপ্য চাই উচ্চারণের মধ্য দিয়ে ,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে শক্ত হাতে দমন ও নির্মূলের দাবি জানান। তিনি অবারো সুকান্তের ভাষায় বলেন “আজ আর বিমূঢ় আস্ফালন নয় / দিগন্তে প্রত্যাশন্ন সর্বনাশের ঝড় / তা যদি না হয় বিপদ নামুক ভয়্কংর / তা যদি নাহয় ঝড় বন্যায় ভাঙ্গুক ঘর / তা যদি না হয় বুঝবো তুমিতো মানুৃষ নও / গোপনে গোপনে দেশদ্রোহীর পতাকা বও। ”
অনুষ্ঠানে আলোচনায় কলামিষ্ট  হাসান ফেরদৌস সাপ্তাহিক বাঙালী’র সম্পাদক কৌশিক আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত বিজয় দিবসে মিশনের এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান জনাব জামাল উদ্দিন আহমেদ। শুরুতে সমবেত জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বানী পাঠ করেন মিশনের উপস্থায়ী প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন মিশনের মিনিস্টার (ইকোনমিক)  বরুন দেব মিত্র। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন ডিফেন্স এ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম আখতারউজজামান।

নিউইয়র্কে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় পতাকা ও ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি  উপহার দিয়ে মিশনের পক্ষে শুভেচছা জানান স্থায়ী প্রতিনিধি ড.এ.কে আব্দুল মোমেন। শিশুদের  চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করেন সেলিনা মোমেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের  আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন কাজী শাহজাহান বেলাল ও ড. গুলশান আরা কাজী। কবিতা আবৃতি পরিবেশনায় অন্যান্যের মধ্যে আবৃতি করেন গাজী কাশেম। যুদ্ধকালীন সময়ের প্রামান্যচিত্র পরিবেশন করেন তহমিনা জাফর। তরুণ শিল্পীদের পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের গান নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাগো নারী জাগো ও চল চল.... গানটি  পরিবেশন করা হয়। সমগ্র সাংস্কৃতিক পর্বটির থিম ছিল “প্রগতির পথে বাংলাদেশ”।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন , ৭১’র পরাজিত শক্তি হিং¯্র ফণা তুলে আঘাত হানতে উদ্যত। তাই আজ কলহ, সংকীর্ণ স্বার্থ ভুলে দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য বড় জরুরি। এই বোধ আশা করি সবার মধ্যে তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলেই লাখ শহীদদের রক্ত ঋণ শোধ করব আমরা। এখন দরকার সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ঐক্য।

গনজাগরণ মঞ্চ

জ্যাকসন হাইটসে সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল এর  দুটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন সহ সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করে গনজাগরণ মঞ্চ। কলামিষ্ট বেলালবেগ বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানে। পরে শাহবাগ চত্বরের সাথে একহয়ে স্থানীয় সময় ভোর রাতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

রক্তাক্ত মারপিটে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের বিজয় দিবস

মহান বিজয় দিবস উদযাপনে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক রক্তাক্ত মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। পুরোনো  আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে দলের সহ সভাপতি নজমুল ইসলাম ও উপদেষ্ঠা সাইফুল ইসলাম রহিমের মধ্যে বচসার একপর্যায়ে নজমুল ইসলাম সাইফুল ইসলাম রহিমকে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেন। ঘুষিতে চশমার কাচ ভেঙ্গে সাইফুল ইসলাম রহিমের চোখের পাশে অনেক খানি কেটে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে দুপক্ষের মারপিট চরমে পৌঁছায়। মারপিটে চেয়ার ব্যবহারও বাদ যায়নি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এসময় টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন। মারপিটের তা-বে পুরো জ্যাকসন হাইটস এলাকায় আতঙ্কময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে উদিচীর শিশু ও নারীরা দৌড়ে নিরাপদে আত্মরক্ষা করে। এঘটনায় পুলিশ এসে নজমুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম রহিম দুজনকেই হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তবে গভীর রাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে দুজনকে জামিন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থল পালকি সেন্টার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেয় এরপর এমন ঘটনা ঘটলে প্রতিষ্ঠানটিই বন্ধের ব্যবস্থা করবে পুলিশ, কারণ এখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই পুলিশী হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।

বিজয় দিবস পালনের আয়োজনটি প্রথমে প- হলেও কয়েকঘন্টা পরে  যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের বিজয়ে দিবসের অনুষ্ঠান আবার শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আকতার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ,সৈয়দ বশারত আলী ,আব্দুর রহিম বাদশা, সিরাজউদ্দীন সোহাগ প্রমুখ । অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শহীদ হাসানসহ অন্যান্যরা সংগীত পরিবেশন করেন।

বাংলাদেশ সময় ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ