ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

দারিদ্র্য নির্মূলের প্রত্যয়, রোহিঙ্গা সহযোগিতার আশ্বাস

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
দারিদ্র্য নির্মূলের প্রত্যয়, রোহিঙ্গা সহযোগিতার আশ্বাস বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তিনদিনের বসন্তকালীন সভার একাংশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে: বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তিনদিনের বসন্তকালীন সভার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘ইন্ড প্রভার্টি’। বৈঠকে দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যতো দ্রুত সম্ভব দারিদ্র্য দূরসহ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব উপহার দেওয়ার বিষয়েও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাদের জন্য এরইমধ্যে ৪২৫ কোটি টাকার একটি অনুদানের প্রকল্প অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক।

পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে ব্যাপক সংস্কারে আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
 
কোন পথে গেলে দ্রুত দারিদ্র্য নির্মূল হবে সে বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেলিগেটসরাও দারিদ্র্য নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের ফর্মূলা উপস্থাপন করেছেন। মিশর থেকে বসন্তকালীন বৈঠকে যোগ দিয়েছেন সাদ আহমেদ আনাসী। তার মতে, স্বাস্থ্য-সুশিক্ষা নিশ্চিত, দুর্নীতি দূর, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে পারলে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে। সবার আগে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতন হতে হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে নিতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে এই সংস্কার আনতে হবে। শ্রেণিকক্ষের মান বাড়ানো, পড়াশোনার মানোন্নয়ন, মাল্টিমিডিয়া, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোসহ সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অনেক টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে শিক্ষাখাতে আমূল সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরেছি। একইসঙ্গে তাদের কাছে বাড়তি বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছি। বিশ্বব্যাংক আমাদের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।  

বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, শরণার্থী হওয়া কি কষ্ট তা আমরা বুঝি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশ থেকে এককোটি মানুষ পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন আমাদের দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা। বসন্তকালীন সভায় আমরা মানবিক বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের সামনে তুলে ধরেছি। তারা আমাদেরকে বলেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
 
দারিদ্র্য নির্মূল প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও দারিদ্র্য নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) আগামী বছরে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে দারিদ্র্যও পালাবে।

বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি এবং অংশীজনের কাছে বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ।

বিশ্বব্যাংকের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা নিয়ে পৃথক একটি সেশনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ২০টি দেশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘ভালনারেবল গ্রুপ-২০’ এর সভাও এদিন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অভিযোজন ও উপশমখাতের জন্য একটি তহবিল গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে তহবিলের আকার কেমন হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আসে।

ওইসব বৈঠকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোর নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে আমূল সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থিকখাতের উন্নয়নে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৈঠকে আলোচনা হয় রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা বের করা।

এদিকে ভেতরে বৈঠক হলেও বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে। তাতে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়া’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণে অর্থায়ন করায় জাপান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন অনেকে।

এবারের বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভার প্রথম দিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার পর ম্যালপাস জানিয়েছেন, আগে তিনি যা কিছু বলেছেন, তা অতীত। এখন তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। তাই বিশ্বব্যাংকের যে নীতি-কৌশল, তা মেনেই তিনি কাজ করবেন। তবে তার এই কথায় এখনো অনেক দেশ আশ্বস্ত হতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
এমআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ