ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপন্যাস

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

প্রথম অধ্যায়

প্রথম সাক্ষাৎ
১৮৮৮ সালের আগষ্ট মাসের তিন তারিখ লিজ শহরে আমার জন্ম। বিয়ের আগে আমার বাবা লিজ শহরের একটি আসবাবপত্র নির্মাণের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি প্রতিদিন তার দুপুরের খাবারের জন্য পাশের একটি রেস্তোরাঁয় যেতেন এবং সেখানেই তিনি আমার মায়ের সঙ্গে পরিচিত হন। আমার মা সেই রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করতেন। তারা প্রেমে পড়েন এবং ১৮৮৭ সালের জুলাই মাসে বিয়ে করেন।

প্রথমদিকে এই নবদম্পতি আমার মায়ের বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। আমার বাবার আয় ছিলো স্বল্প কিন্তু কাজ ছিলো অনেক পরিশ্রমের। অন্যদিকে, মা আমাকে জন্ম দেবেন বলে তার কাজটিও ছেড়ে দেন। অতএব স্পষ্টত, আমার জন্ম হয়েছিলো কঠিন এক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে। এক বছর পর আমার বোন মারিয়ার জন্ম হয় এবং খুব অল্প বয়সেই সে মারা যায়। পরবর্তীতে আমার আরও এক বোন মাত্র চার বছর বয়সে মারা যায়। আমার তৃতীয় বোন কেরোলিনা কঠিন অসুখের মধ্যে পড়ে এবং সেও মাত্র আট বছর বয়সে মারা যায়। এ কারণেই আমার মা সবসময় আমাকে নিয়ে একটা শঙ্কায় ভুগতেন। সারাজীবন তিনি এই ভয়ই পেতেন, না জানি তিনি আমাকেও হারান। কারণ, আমিই তার চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র জীবিত ছিলাম। খুব স্বাভাবিক, মায়ের সব ভালোবাসা শুধু আমার উপরই নিহিত ছিল।

হিটলার ও কুবিজেক পরিবারের জীবন বিড়ম্বনার কাহিনীসূত্রে মোটামুটি একইরকম চিত্র ধরা পড়ে। দু’জনের মায়ের কষ্টচিত্র মোটামুটি একইরকম। হিটলারের মা তিন সন্তান হারিয়েছিলেন। গুস্তভ, আইডা ও অট্টো। অ্যাডলফ ছিলেন একমাত্র সন্তান যিনি বেঁচে ছিলেন। যখন হিটলারের বয়স পাঁচ তখন তার ছয় বছর বয়সি ভাই অ্যাডমন্ড মারা যায়। ১৮৯৬ সালে জন্ম নেওয়া একমাত্র বোন পাওলা মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। হিটলার ও আমি, আমরা দু’জনই ভাই-বোন হারিয়ে মোটামুটি একই পথের পথিক হয়ে জন্মেছিলাম। তখন মনে হতো, হয়তো আমাদের বেঁচে থাকার পেছনে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণও থাকতে পারে।



হিটলার প্রায়সময়ই আমাকে অগাস্ট’র পরিবর্তে গুস্তভ বলে সম্বোধন করতো। এমনকি একটি চিঠিতেও সে আমাকে গুস্তভ বলে সম্বোধন করেছিলো। গুস্তভ ছিলো তার প্রথম ভাই যে খুব অল্প বয়সেই মারা যায়। সম্ভবত সে তার ভাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই আমাকে গুস্তভ বলে সম্বোধন করতো। অথবা এমনও হতে পারে, গুস্তভ নামটা চালু রেখে সে তার মাকে খুশি করতে চাইতো।



এরমধ্যে আমার বাবা নিজেই নাইন ক্লামস্ট্রাসে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। পুরনো বৃহদাকার ও দেখতে বিকট বারন্রিটহেরহাস বাড়িটা আগের মতোই অপরিবর্তনশীল অবস্থায় থেকে যায় যা পরবর্তীতে আমার কৈশোর ও যৌবনের অনেক স্মৃতিই জমিয়ে রাখে। দেখতে সরু নতুন ক্লামস্ট্রাসের বাড়িটা পুরনো বাড়ির গাছগাছালি ও সামনের বিশাল বাগানের তুলনায় অনেকটা দায়সারা গোছের।

পুরনো বাড়ির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আমার বোনের মৃত্যুর জন্য অনেকাংশেই দায়ী থাকবে। বারন্রিটহেরহাস বাড়িটার বিষয়টা একটু অন্যরকম। নিচতলা ছিলো ওয়ার্কশপ। প্রথম তলায় ছিলো দু’টি কক্ষ ও একটি রান্নাঘর। আমার বাবা কখনই টাকার সমস্যা থেকে মুক্ত ছিলেন না। টাকার অভাব তার জীবনে লেগেই থাকতো। ব্যবসা ছিলো মন্দা। কখনও বাবা ব্যবসার কাজে মনযোগ দিতেন আবার কখনও চাকরি করতেন। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কঠিন সময়গুলোকে তিনি শক্ত হাতে বশে আনতে পারতেন।

একটি অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি আমার স্কুল শুরু করেছিলাম। স্কুল থেকে নিয়ে আসা রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে আমার মা কেঁদেছিলেন। তিনি আমাকে স্কুলে ভালো ফল করার জন্যে চাপ দিতে লাগলেন। কিন্তু বাবা ছিলো একটু অন্যরকম। এ বিষয়ে তার কোনো প্রশ্ন ছিলো না। বাবা বরং চাইতেন, আমি যেনো তার ব্যবসাটা কাঁধে নিয়ে নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রীতদাসের মতো খাটা থেকে যেনো তাকে মুক্তি দেই। কিন্তু মা চাইতেন, পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও আমি যেনো স্কুল না ছাড়ি। তিনি চাইতেন, প্রথম চার বছর আমি গ্রামার স্কুলে যাই তারপর টিচার’স ট্রেনিং কলেজ। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম, আমার বাবা শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ে নাক গলালেন। আমার বয়স যখন দশ তখন আমাকে ‘কাউন্সিল স্কুল’-এ পাঠানো হলো। অন্তত আমার বাবার ধারণা, এতে আমার ভবিষ্যতের একটি সূচনা হবে।

অনেক দিন ধরে আরেকটি বিষয়ে আমি আমার মনপ্রাণ সঁপে দেই তা হলো, সঙ্গীত। ১৮৯৭ সালে ক্রিস্টমাসে যখন আমার বয়স মাত্র নয় তখন আমি ভায়োলিন বাজিয়েছিলাম। সেই অসাধারণ স্মৃতিগুলোর কথা যখন আমার বুড়ো বয়সে ভাবি, তখন মনে হয়, আমার জীবনের সত্যিকার শুরুটা হয়েছিলো সেদিন থেকেই। এক প্রতিবেশীর ভায়োলিন শিক্ষক ছিলেন আমার প্রথম ভায়োলিন শিক্ষক। আমি তার কাছ থেকে দ্রুত এবং খুব ভালোভাবেই বাজানো শিখে ফেলি।
চলবে…



বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

উপন্যাস এর সর্বশেষ