৪১.
ছোটখালার বাসার উঠানের কোণে করমচা গাছের নীচে আমি আর অন্তরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারপাশে থোকা থোকা অন্ধকার।
-তোর কিচ্ছু হয় নি অন্তরা। তোর কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সে মনে হলো কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। করতলে মুখ মুছে মাথা ঝাঁকালো সে। আমি আবারও বলি:
-কেন এমন করছিস? নীল অন্ধকারে উদভ্রান্ত উড়ালে হারিয়ে যাচ্ছিস?
অন্তরা মুখ নীচু করলো। মাটির দিকে তাকিয়ে বললো:
-আমার কিছুই ভালো লাগে না। আমার স্বপ্ন নেই, গান নেই, ঘুম নেই। আমার কিচ্ছু নেই।
অকস্মাৎ বাগানের অন্ধকার থেকে কেউ এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। অন্তরা ছিটকে পড়লো দূরে। আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে একটি ছুরির ফলা সাপের মতো আমাকে দংশন করছে। মাটিতে শরীর বিছিয়ে দেওয়ার আগে আমি আকাশে একটি প্লেনের চলে যাওয়া দেখতে পেলাম। ওই প্লেনে কি মার্গারেট আছে। আহা! সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে....।
অন্তরা স্বপ্নের মতো ভাবলো, ভাইয়া এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। সে ভাইয়ার কানে বিড় বিড় করে বলছে, যে দিন তোমাকে ঠিক ঠিক বুঝতে পারবো আর তখন তোমাকে যদি আবার আগের মতো একেলা পাই, তাহলে আমি ছাড়া তুমি আর কারও হতে পারবে না।
অন্তরা টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মনেই অন্ধকার থেকে আসা হন্তারককে বললো, আঙ্কেল, ভাইয়া ভীষণ লাকি! কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আমাকেও এখন ঘুম এনে দাও, গভীর ঘুম....।
সন্ধ্যামাখা করমচা গাছের তলে অতলান্ত ঘুমের অপেক্ষায় অন্তরা তখন নীল ছায়ামেঘ; দুঃস্বপ্ন-দিগন্তের শেষ কিনারে অস্থির-দিকভ্রান্ত উড়ালে উড়ালে ভাসমান....। [সমাপ্ত]
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
জেডএম/