ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

বাঁ-হাতিদের সংখ্যা কেন মাত্র ১০ শতাংশ?

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৬
বাঁ-হাতিদের সংখ্যা কেন মাত্র ১০ শতাংশ?

পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ বাঁ-হাতি!
এক হাত কীভাবে মানুষের কাজ-কর্মের নিয়ন্ত্রক হয়? ডান-হাতি মানুষের তুলনায় বাঁ-হাতিরা সংখ্যায় এতো কমই বা কেন?- এসব নিয়ে গবেষণা করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ আমাদের প্রাকৃতিক শক্তির খেলার বিষয়।


আমরা জানি, ডান-বাম হাতের ব্যবহারের আধিক্য জেনেটিকভাবেই তৈরি হয়। জিন বিজ্ঞানীরা এখনও ডিএনএকে এর সঙ্গে জড়িত করার তুচ্ছ পরীক্ষার চেষ্টা করছেন, যেখানে কেউ ভালো খেলার সময়ে ৪০ ধরনের জিন হতে পারে। কিন্তু মানদণ্ড হিসাবে কোন বিষয়টি ডান বা বা-হাতি নির্ধারণ করে এবং কেন বা-হাতিরা সংখ্যালঘু হয়- সে প্রশ্নের উত্তরে অবশেষে তারা বলেছেন-‘জানি না’।

মানুষ কীভাবে বাম-হাতি হচ্ছে, তার ওপর মস্তিষ্কের প্রভাব সম্পর্কে একটি দীর্ঘ চলমান বিতর্ক রয়েছে। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, মস্তিষ্কের ডান দিকটা বাম হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে আর বাম দিকটা ডান হাতকে। তাই বাঁ-হাতিদের মস্তিষ্কের ওপর এর প্রভাব পড়ে। বাঁ-হাতিদের ঘিলু সংগঠিত ও পরিবর্তনশীল হয়।

লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের মনোবিদ ‘ডান হাত, বাম হাত’ বইয়ের লেখিকা ক্রিস ম্যাকমেনাসের মতে, বাঁ-হাতিদের মস্তিষ্ক সুসংগঠিত ও পরিবর্তনশীল। তারা তুলনামূলকভাবে দক্ষ ও প্রতিভাবান।  

কিন্তু এটাই কি নির্ধারণ করে, আমরা ডান না বাম-হাতি হবো? তার উত্তরও সম্ভবত- ‘না’।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক স্নায়ু মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডরোথি বিশপ বাম-হাতি ছিলেন এবং তার মধ্যে সব সময় বিস্ময়ের উদ্রেক করে, কেন তিনি অন্য মানুষ থেকে ভিন্ন ছিলেন।

বাঁ-হাতিদের ইতিবাচক গুণাবলী রয়েছে এবং স্থপতি ও সঙ্গীতশিল্পীদের বেশিরভাগ বাঁ-হাতি বলেও দাবি করেন অনেক বিজ্ঞানী।
কিন্তু বিশপ বলছেন, ডাউন সিনড্রোম, মৃগি ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্তের সংখ্যাগত অনুপাত বাম-হাতি: ডান-হাতি ৫০:৫০, মূল অনুপাতই যেখানে ১:১০।
বিশপ বলেছেন, বাম হাতের নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকারণের চেয়ে লাক্ষণিক বেশি হতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এটা কিছু অন্তর্নিহিত অবস্থার একটা লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ লোকের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানীয় উন্নয়নের জন্য এসবের কোনো তাৎপর্য নেই।

বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গবেষণায় জানা যায়, শিম্পাঞ্জিদেরও বিভিন্ন কাজের জন্য একটি প্রিয় হাত নির্বাচনের ঝোঁক রয়েছে। প্রতিটি কাজের জন্য তাদের প্রায় ৫০ শতাংশ ডান-হাতি এবং ৫০ শতাংশ হয় বাম-হাতি হয়।
তবে আমাদের বিবর্তনের ধারায় এই ১০ জনের মধ্যে ১ জন বাঁ-হাতির অনুপাতের উত্থান কীভাবে হলো?

একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র নিয়ান্ডারথালদের দাঁত থেকে এসেছে। নিয়ান্ডারথালদের দাঁত সক্রিয় কিন্তু কদাকার ছিল। আমাদের এই পূর্বপুরুষেরা মাংসের টুকরো ছিঁড়তে তাদের দাঁত ব্যবহারের সময় তাদের প্রভাবশালী হাতে একটা ছুরি ধরে সেটিকে কাটা শেষ করতো। বার বার এটা করার ফলে তাদের কর্তক দাঁতে ছুরির আঁচড়ের দাগ পড়ে যায়। তাদের সামনের দাঁতের মধ্যেকার এ খাঁজ স্বতন্ত্র নমুনা প্রকাশ করে, যা হাতের কারণে খাদ্য গ্রহণ সহজ করার পাশাপাশি ছুরিকে সুদৃঢ় করেছে।
 
অবিশ্বাস্যভাবে, ডান-হাতি নিয়ান্ডারথালদের সংখ্যা ১০ জন হলে বাম-হাতি পাওয়া গেছে একজন। সেই সংখ্যার অনুপাত আজ পর্যন্ত চলে আসছে। ফলে তাদের প্রভাবশালী হাতটিকে ডান হাত বলেই সহজেই চিহ্নিত করা গেছে।

বেলফাস্টের কুইন্স ইউনিভার্সিটির পিটার হেপার গর্ভে শিশুদের নড়া-চড়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বিস্ময়কর আল্ট্রাসাউন্ড গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেন, প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জনই তাদের ডান আঙুল চুষেছে, এটি মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তিনি সেই শিশুদের অনেক বছর ধরে অনুসরণ করে দেখেছেন, যেসব শিশু গর্ভে তাদের ডান আঙুল চুষেছে, তারা ডান-হাতি হয়ে উঠেছে। এখানেও ডান-হাতি বাঁ-হাতির অনুপাত সেই দশজনে একজন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
এএসআর/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।