মাছেরাও একে অন্যের সঙ্গে আলাপ করে! তাদেরও রয়েছে যোগাযোগের মাধ্যম। ব্রিটেনের প্রায় প্রতিটি সমুদ্রপথে কিছু উচ্চশব্দ শোনা যায়, যেটা কড ও সমজাতীয় মাছের যোগাযোগের মাধ্যম।
গবেষকদের ধারণা, যদি তাদের এই অনর্থক কথা বলায় বাধা দেওয়া হয়, তা তাদের প্রজননকে ব্যাহত করতে পারে।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ সিম্পসন ও তার সহকর্মীরা এ ধারণাটি যাচাই করতে উপকূলীয় জলের মাধ্যমে হাইড্রোফোন স্থাপন করে সামুদ্রিক এসব শব্দ রেকর্ড করছেন।
এটা দীর্ঘ স্বীকৃত যে, প্রবাল প্রাচীর মাছের মতো বৃহৎ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা উচ্চশব্দ করতে পারে। কিন্তু নতুন এ গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের আরও কিছু পরিচিত প্রজাতির মাছের ওপর করা হচ্ছে।
‘অনেক মাছের তুলনায় কডের উচ্চমাত্রায় শব্দ করার ক্ষমতা রয়েছে। শব্দ করতে তারা তাদের ভেতরের স্নানের থলি বেলুনের মতো প্রসারিত করে। তারা ফট ফট, ঘোঁৎ ঘোঁৎ এবং গজরানির মতো বিভিন্ন ধরনের শব্দও তৈরি করতে পারে’- বলেন সিম্পসন।
এসব প্রাণী ডিম ছাড়ার সময় গান করে। পুরুষ মাছ গান করে। তারপর নারী ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে।
ডিম ছাড়ার বাইরেও সামুদ্রিক পরিবহন চলাচল অঞ্চলে কড মাছ তাৎক্ষণিক হুমকির বিষয়ে স্বজাতিকে সতর্ক করতে শব্দ করে। জাহাজ চলাচল ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানসহ মানুষের করা অন্য সব অসহনীয় শব্দ, যা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেসব এড়িয়ে চলতে এ শব্দ সহায়ক হয়।
‘এ পর্যন্ত সাউন্ডসকেপ শোনা যায়, যুক্তরাজ্যের এমন সামুদ্রিক অঞ্চলের মানচিত্র তৈরিতে খুব সামান্যই কাজ করা সম্ভব হয়েছে’- বলেন অধ্যাপক সিম্পসন।
ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ডান পাশের প্রায় সব এলাকায় ডুবো মাইক্রোফোন স্থাপন করে এ গবেষণা চালাচ্ছেন তার দল।
অন্যের ধ্বনি অনুসরণ করে কিছু আঞ্চলিক প্রজাতির মাছের কণ্ঠস্বর নিজেদের চেয়ে একটু ভিন্ন হয়ে যায়। এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য প্রাণীর কণ্ঠস্বরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
যেমন, একটি অঞ্চলের তিমি থেকে শুরু করে গায়ক পাখি পর্যন্ত প্রাণীদের ‘উপভাষায়’ সাদৃশ্যের উল্লেখ আগের গবেষণাগুলোতেই রয়েছে। এর মধ্যে ক্লোনফিসও নথিভুক্ত হয়েছে।
আমেরিকান গবেষণার ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক সিম্পসন বলেন, একই বিষয় কড মাছের জন্যও সত্য হতে পারে।
এই পর্যবেক্ষণ বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও প্রাসঙ্গিক হতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, ব্রিটেনের জল উষ্ণ হয়ে গেলে কিছু মাছ আরও উত্তরে সরে যেতে থাকে।
‘একটি উদ্বেগের বিষয় হতে পারে যে, উপার্জনকারী ও বসবাসকারী জনগোষ্ঠী একে অপরের কণ্ঠ অনুসরণ করলে একীভূতকরণ ও প্রজনন বিঘ্নিত হতে পারে, যা তাদের চিহ্নিত করাটাও কষ্টকর হতে পারে। ’
‘একটি এলাকার পশুদের মধ্যে একটি স্থানীয় পদ্ধতির বিকাশঘটে, বিশেষভাবে প্রজননের ক্ষেত্রে’- অধ্যাপক সিম্পসনেরব্যাখ্যা।
যেমন, ডিম ছাড়ার সময় কড মাছ নিচে ও কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করে। তারপর একটি নারী মাছ ও একটি পুরুষ মাছ ওপরের দিকে উঠতে থাকে। পুরুষটি তার ভালোবাসার গান গাইতে ১০ সেকেন্ড সময় পায়। সে সেটি করতে পারলে মা মাছ ডিম পাড়ে। আর তা করতে ভুল করলে নারীটি ফিরে গিয়ে নিচের দিকে সাঁতার কাটতে থাকে।
অধ্যাপক সিম্পসন গত মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) নয়দিনের এ বিজ্ঞান বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গবেষণা কাজ শুরু হয়েছে। এতে অর্থায়নে করছে প্রাকৃতিক পরিবেশ রিসার্চ কাউন্সিল (এনইআরসি)।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৬
এএসআর/এএ