একটি ‘নেড়ি’ কুকুর দেখে শুরু হলে দিনটি খারাপ যায় বলে মনে করা হয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। কিন্তু আদতে এটি যে একটি কুসংস্কার সেটিও প্রমাণ হয়েছে এই রাজধানী শহরে।
আশ্রয়হীন ও রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো কুকুরদেরই স্থানীয় ভাষায় নেড়ি বলা হয়। প্রায় ৪ লাখ নেড়ি কুকুর আছে দিল্লিতে, যারা কোনো বাড়িতে আশ্রয় পায় না।
নেড়ি কুকুরদের কামড়াতে আসা ভিলেন বলে মনে করা হয় এবং তারা প্রায়ই মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়।
কিন্তু এ জাতীয় অনেক কুকুরও নগরীটিতে মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে সুখে বসবাস করছে। অনেকে কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের মতো বিচিত্র অভ্যাস গড়ে তুলেছে। অন্যরা খোলা বাজারে ঘুরে বেড়ায়, অস্বাভাবিক ওজনপ্রাপ্ত হয় এবং দিনভর ঘুমায়।
কিছু ‘পয়মন্ত’ কুকুরের গল্প বলা হচ্ছে এখানে।
নিগার
নিগারকে দেখতে সুখী কুকুর মনে হলেও সে কিছু কাণ্ডকীর্তি দিয়ে নিজের চাহিদা গড়ে তুলেছে।
দিল্লির বিখ্যাত জনপথ বাজারের ক্লিনার রাজরানী বলেন, সে সাধারণত সকালে চাপাতি (ভারতীয় প্রশস্ত রুটি) এবং সন্ধ্যায় মালকড়ি (ভাপে রান্না করা মাংস ও চর্বির বল) খেতে চায়। এ রুটিনের কোনো পরিবর্তন হলে সে মন খারাপ করে।
‘আমি তাকে খেতে দেই। সে আমার পরিবারের সদস্যদের মতো এবং একটি দিনও তাকে না দেখলে মন খারাপ হয়। ’
বাজারটির মালকড়ি বিক্রেতা দীপক জিসি বলেন, নিগার আমার দোকানে এলে আমি খুশি হই। সে মুরগির মালকড়ি বেশি পছন্দ করে এবং অন্য কিছু খেতে চায় না। আর আমি যদি ঘুণাক্ষরেও তাকে খাবার দিতে দেরি করে ফেলি, তার তীব্র ক্রোধ মোকাবেলা করতে হয়’- বলেন দীপক
‘কিন্তু এ ক্রোধের পেছনে নিগারের একটি দুঃখজনক অতীত আছে। যখন তাকে পেলাম, সে খারাপ অবস্থায় ছিলো। সে অনেকগুলো বাচ্চা প্রসব করেছিল। কিন্তু কিছু উগ্র লোক তাদের মেরে ফেলে। আমি নিগারের যত্ন নেই এবং তার মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করি। তখন থেকে সে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে গেছে’- বলেন রাজরানী।
কাঞ্জারি ও কালু
দিল্লির কনট প্লেসের বাদামি রঙের কাঞ্জারি ও কালো রঙের কালুর বয়স যথাক্রমে পাঁচ ও ছয় বছর।
তাদের নামকরণ ও দেখাশোনা করেন এলাকার ক্লিনার সুধা কুমারী, যিনি তাদের ছানা অবস্থায় খুঁজে পান।
সুধা মজা করে কাঞ্জারিকে কিন্নরকণ্ঠী গায়িকা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ‘আমি তাকে খাবার দিতে অল্প দেরি করলেও সে রাগ হয় এবং খেতে চায় না। সে নিজেকে এখনও কুকুরছানা বলেই ভাবে। ’
‘কালু একটি শান্ত কুকুর। সে নির্দেশাবলী ভালোভাবে মেনে চলে, তবে কাঞ্জারির মতো অনুরক্ত নয়’- বলেন সুধা কুমারী।
সনু
পাঁচ বছর বয়সী কুকুর সনু দিল্লির কস্তুরবা শহরে ঘোরাঘুরি করে। একটি ক্যাটারিং সার্ভিস ও চায়ের দোকানের কর্মী বিজয় কুমার মৌর্য তাকে প্রতিদিন খেতে দেন।
তিনি বলেন, সনু অনুগত। তবে যদি তাকে বাসি খাবার দেই, সে মর্মাহত হয়। সে বিস্কুট পছন্দ করে। কিন্তু সে জানে না, কখন খাওয়া বন্ধ করতে হয়। মাঝে মাঝে সে অনেক খেয়ে ফেলে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এখন আমি শিখে গেছি যে, তাকে কখন খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ’
বিজয় মৌর্য ২০১১ সালে সনুকে একটি নিঃসঙ্গ ও পরিত্যক্ত কুকুরছানা হিসেবে খুঁজে পান।
‘তখন তার বয়স প্রায় দুই মাস। আমি তাকে দুধ ও বিস্কুট খাওয়ানো শুরু করি। এখন এটি আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। আমার অনেক নেড়িকে খাওয়ানোর সামর্থ্য না থাকায় ভেবেছিলাম, আমি অন্তত একটিকে খাওয়াতে পারি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৬
এএসআর/এএ