ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

মানুষ ও যন্ত্রের শিল্প

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
মানুষ ও যন্ত্রের শিল্প

রোবোটিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের একটি প্রতিযোগিতা চলতি সপ্তাহে শুরু হয়েছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। কেলি গ্রোভিয়ার সেখানে একটি দৃশ্যকল্পে মানুষ ও যন্ত্রের সমন্বিত সৃষ্টির শিল্পিত রূপ দেখিয়েছেন।


 
সাইবাথলন’২০১৬ শীর্ষক প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের ওই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীরা তাদের হারানো অঙ্গে যন্ত্র বসিয়ে অংশ নেন।
 
কেলি গ্রোভিয়ার বলেন, ‘শিল্পের ইতিহাসে মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সামান্যই সীমানা রয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রতিযোগীদেরকে প্রকৌশলবিদ্যার সাহায্যে পূর্ণাঙ্গ মানুষের রুপ দেওয়া হয়। যন্ত্রের সমন্বয়ে তাদেরকে স্বপ্নদর্শী মনে হচ্ছিল। নিজ নিজ ইভেন্টের প্রতিযোগিতায় তাদের নিজেদের প্রতি অনন্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা ছিল। এটি যেন মানুষ ও যন্ত্রের সমন্বিত শিল্পের নান্দনিক স্বপ্নাবিষ্ট অসাধ্য সাধন’।

পপ শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহোল ১৯৬৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি একটি যন্ত্র হতে চাই। কারণ, আমি এ পথ অঙ্কন করছি’। তার এ মন্তব্য যারা বিশ্বাস করেন যে, শিল্প নির্মাণের স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন আত্মার বিরুদ্ধাচারণ, তাদেরকে অবাক করতে পারে। আসলে তার স্বীকারোক্তি নিছক একটি মনোভাব।
মানুষ-যন্ত্রের এ শিল্প শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধরে স্পষ্ট করেছেন বিখ্যাত মানুষেরাও। ১৪৯০ সালের গোড়ার দিকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তার বিখ্যাত চিত্র ‘ভিটরুভিয়ান ম্যান’ এ মানবদেহ সম্বলিত মানবিক রোবট নির্মাণের নিজস্ব নকশা এঁকেছিলেন। মানুষ-যন্ত্রের একতার অনুপাত প্রদর্শন ছাড়াও এর একটি অংশ মানব আকৃতির মতো ছিল।  
 
চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর মার্সেল ডাকাম্পের তৈরি আধুনিক প্রতিকৃতিগুলোও মানবদেহের সৌন্দর্য যান্ত্রিক উপাদানে প্রকাশিত। যেমন- তার ১৯১২ সালের সৃষ্টি ‘একটি সিঁড়ি (২)’  যেন ক্র্যাংশেফট ও ফাঁপা পিস্টনের সমন্বয়ে একটি যন্ত্রমানব তৈরির প্রচেষ্টার অংশ, যা একবারে ভিঞ্চির সৃষ্টির মতোই দেখায়।

ইতালীয় ভাস্কর্য শিল্পী উমবার্তো বকিওনির শিল্পের মধ্যেও ছিল এ ধারাবাহিকতার স্বতন্ত্র ফরম। ১৯১৩  সালে নির্মিত এই ভবিষ্যৎদ্রষ্টা শিল্পীর ‘নগ্ন মানব’ ভাষ্কর্য পেশি ও যান্ত্রিক গতির মিশ্রণ। সাইবাথলনের আদলে তৈরি এ শিল্পটি আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ।
 
ডাকাম্পের পর বকিওনি তার নিজের সঙ্গে শিল্পের সংবেশিত নিশ্চল সমন্বয় করেন। মূলত প্লাস্টারে ( এ শিল্পীর মৃত্যুর ১৫ বছর পর ১৯৩১ সালে ভাষ্কর্যে ব্রোঞ্জ সংযোজিত হয়) তৈরি বকিওনির ফর্মেটকে মানুষ ও যন্ত্রের সদ্য আবিষ্কৃত সংমিশ্রণ বলে বলে মনে হয়। আধুনিক বিশ্বের দুর্দমনীয় গতিশীলতাও সেখানে প্রতীকায়িত এবং প্রযুক্তির শ্বাসাঘাতে মোটর ও মনকে একত্রিত করা হয়। বকিওনির দর্শনের দ্রুতগামী উপাদানে যেন সময় নিজেই একটি গুরুত্বহীন ওজনের মধ্যে জমাটবদ্ধ হয়েছে।
 
প্রথম সাইবাথলনে এ সপ্তাহে তোলা ছবিগুলোও যেন শিল্পীর তরল ফর্মে অতীত ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন এবং বাস্তবের সমন্বিত রুপায়ন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।