ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

অলৌকিক সার্জারিতে দু’বার জন্ম মেয়ে শিশুর!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
অলৌকিক সার্জারিতে দু’বার জন্ম মেয়ে শিশুর!

মায়ের গর্ভে ভ্রুণের সঙ্গই বাড়ছিলো একটি টিউমার। কিন্তু টিউমারটির ওজন শিশুটির সমান হওয়ায় তাকে বাইরে বের না করে টিউমার অপসারণ সম্ভব হচ্ছিলো না।

এদিকে টিউমারটি থাকলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো শিশুটির।

এজন্য শিশুটিকে বাঁচাতে টিউমার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। মাতৃগর্ভ থেকে শিশুটিকে তাই অস্থায়ীভাবে বের করা হয় টিউমার অস্ত্রোপচারের জন্য। ২০ মিনিট বাইরে রেখে আবারও মাতৃগর্ভে স্থাপন করা হয় তাকে। এরপর মাকে ১২ সপ্তাহের বিশ্রামে রেখে ফের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেওয়া হয় সুস্থ সবল শিশুটিকে।

এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে দু’বার জন্ম হয়েছে লিনলি হোপ বোয়েমার নামে ওই নারী শিশুটির।

যুগান্তকারী ওই সফল সার্জারি করেছেন টেক্সাস শিশু হাসপাতালের সার্জনরা। ২৪ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় মায়ের গর্ভ থেকে শিশুটিকে ২০ মিনিট বাইরে রাখেন আর ৩৬ সপ্তাহে অস্ত্রোপচার করে দ্বিতীয়বারের মতো ‘জন্ম’ দেন তারা।

এই অলৌকিক ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের মার্গারেট বোয়েমারের জীবনে।

মার্গারেট যখন ১৬ সপ্তাহের গর্ভবতী তখন তিনি নিয়মিত আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য হাসপাতালে আসতেন। চিকিৎসকেরা জানান, একটি মারাত্মক সমস্যা রয়েছে গর্ভের শিশুটির। শিশুটির স্যাক্রোকোসসিজাল টেরাটমা হয়েছে। এটি এমন একটি বিরল রোগ, যাতে একটি শিশু জন্মের আগে টেইলবোন থেকে টিউমার জন্মায়।

মার্গারেট বলেন, ‘আল্ট্রাসনোগ্রামের ফলাফলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, এতো বড় লম্বা শব্দটার (স্যাক্রোকোসসিজাল টেরাটমা) মানে আমরা জানতাম না। আমাদের কি করতে হবে তাও জানতাম না’।

মার্গারেটের সার্জ‍ারি দলের একজন যুক্তরাষ্ট্রের বেলোর কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও টেক্সাস শিশু হাসপাতালের সহ-পরিচালক ড্যারেল ক্যাস বলেন, ‘এটি নবজাতকের মধ্যে সাধারণ টিউমার হিসেবে দেখছি আমরা। তবে সাধারণ হলেও এখনও বেশ বিরল’।

টেরাটমা আক্রান্ত প্রতি ৩ লাখ থেকে ৭ লাখ শিশুর মধ্যে মাত্র একটি শিশুর ব‍াঁচার সম্ভাবনা থ‍াকে, জানান ক্যাস।

তিনি বলেন, ‘ছেলে শিশুদের চেয়ে মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। যদিও এর কারণ জানা যায়নি’।

তবে কখনো কখনো চিকিৎসকরা শিশুর জন্ম না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন অস্ত্রোপচারের জন্য। কিন্তু লিনলির ক্ষেত্রে দেখা যায়, টিউমারটি শিশুটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় হচ্ছিলো।

অনেক সময় টিউমারটি বড় হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে শিশুর হৃদপিণ্ড অকেজো হয়ে পড়তে থাকে। ফলে এক সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শিশু মারা যায়।

ক্যাসের মতে, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমার জিতে যায়, ভ্রুণ বাঁচানো যায়না। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং শিশু মারা যায়’- বলেন তিনি।

ক্যাস বলেন, ‘মার্গারেটের গর্ভাবস্থার ২৩ সপ্তাহ ৫ দিনে দেখা যায়, ভ্রূণের প্রায় কাছাকাছি ওজনে পৌঁছেছে টিউমার। ২৪ সপ্তাহে দেখা যায়, শিশুটির সমান হয়ে গেছে টিউমারের আকারও। আমরা তার জীবন বাঁচাতে চেয়েছিলাম। তাই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেই’।

মা মার্গারেট বলেন, ‘২৩ সপ্তাহে টিউমারের চাপে শিশুর কার্ডিয়াক ফেইলের আশঙ্কা ছিলো। তাই শিশুটিকে বাঁচানো অথবা টিউমারটি রেখে দেওয়ার মধ্যে যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিলো’।

ক্যাস ও ওলুইংকা ওলুটয়ি পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করেন। তবে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট, চিকিৎসকরা জানান।

সার্জনরা মাতৃগর্ভ থেকে ১ দশমিক ৩ পাউন্ড ওজনের শিশুটিকে বের করেন। ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করে সফলভাবে টিউমার অপসারণ করেন। ২০ মিনিট পর ফের গর্ভে শিশুটিকে স্থাপন করেন।

এরপর মার্গারেটকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রামে রাখা হয়। শিশুটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থভাবেই দ্বিতীয়বারের মতো জন্ম নেয়। জন্মের সময় লিনলি হোপের ওজন ছিলো সাড়ে পাঁচ পাউন্ড। আটদিন বয়সে আরও একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টেইলবোন থেকে অবশিষ্ট টিউমারটুকুও অপসারণ করা হয়।

সিজারিয়ানের মাধ্যমে তার মেয়ের এই জন্মকে মার্গারেট ‘দ্বিতীয়বার জন্ম’ বলে অভিহিত করেন। তাই মেয়ের জন্মদিন হিসেবে দু’টি দিনই পালন করবেন বলেও জানান তিনি।

গত জুন মাসে জন্ম নেওয়া লিনলি হোপের বয়স এখন চার মাস। সে সুস্থ-সবল ও হাসি-খুশি একটি শিশু বলে জানিয়েছেন মা মার্গারেট। ডাক্তার ড্যারেল ক্যাসও বলেন, ‘সে এখনও শিশু, কিন্তু কাজে সুন্দর’।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
এএসআর/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।