সাড়ে ৪শ’ বছর আগে ব্রিটেন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ভোঁদড়। তবে ফের সেখানে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে লম্বা লেজের এই আধা জলজ প্রাণীদের।
বড় তীক্ষ্ণদন্তের ভোঁদড়রা গাছের গুঁড়ি ও বাকল কামড়ে খেয়ে বেঁচে থাকে। তারা জলাশয়ে বাঁধও তৈরি করতে পারে। এমনকি ক্রিকেট ব্যাট ও স্ট্যাম্প তৈরিতেও কাজে লাগছে তাদের এ প্রতিভা।
‘বাস্তু প্রকৌশলী’ নামে পরিচিত পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার প্রাণী ভোঁদড়দের তৈরি বাঁধ সাধারণভাবে ‘বিভার’স ড্যাম’ নামেই বিখ্যাত। এ বাঁধ নির্মাণ ছাড়াও ড্রেনেজ পরিখা খনন করে জলাবদ্ধতা ও বন্যা থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে তারা। বৃষ্টিপাতের আগাম বার্তাও পাওয়া সম্ভব ভোঁদড়দের মাধ্যমে। মাছ শিকারেও ভোঁদড়কে কাজে লাগান বাংলাদেশসহ এশিয়ার জেলেরা।
এছাড়া গৃহপালিত ভোঁদড়েরা উইলো গাছ কামড়ে খেয়ে পুরোনো কাণ্ড অপসারণের দায়িত্ব পালন করে। ফলে গাছ বা গুল্ম নতুনভাবে জন্মে। ‘ভোঁদড় শুধু একটি প্রাণীই নয়, এটি একটি ইকোসিস্টেম’- বলছেন প্রাণীবিজ্ঞানীরাও।
পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরেশিয়ায় এক সময় দশ মিলিয়ন ভোঁদড়ের অস্তিত্ব ছিল। আর সারা বিশ্বে ছিল ৪০০ মিলিয়নের মতো।
তবে কয়েক শতাব্দী আগে থেকে জল ইঁদুরতুল্য এই নিরীহ প্রাণীটি মানুষের আক্রোশের শিকার হয়ে বিলুপ্তির পথে এগোতে থাকে। এরা ‘পুকুরের সব মাছ খেয়ে ফেলে’ এমন ধারণাও রয়েছে কারো কারো। আর এ ধারণাকে হাতিয়ার করে তৈলাক্ত চামড়ার লোভে শিকারিরা ব্যাপকহারে ভোঁদড় হত্যা করেন। অনেকে মাছের বিকল্প হিসেবেও এদের খেয়ে ফেলতে থাকেন। স্কটল্যান্ডে ১৫২৬ সালে শেষ ভোঁদড়টিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তবে এক সময় মানুষের সচেতনতা বাড়ে। ১৮৯৯ সালে ভোঁদড় শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপকারী এ প্রজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে ইউরোপজুড়ে উদ্যোগ শুরু হয়।
ব্রিটেনে ভোঁদড় সংরক্ষণে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ডেভন শহরের মাঝখানে অভয়ারণ্য নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ভোঁদড়ের জীবিত বিভিন্ন প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ফ্রান্স, বেলারুশ, জার্মানি, নরওয়ে ও রাশিয়ায়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এএসআর/টিআই/আরআই