গত এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় অ্যাকুরিয়াম থেকে একটি অক্টোপাস পালিয়ে যায়। রাতের বেলা তার ট্যাংকটির ঢাকনা আধখোলা ছিল।
মুক্তির জন্য তার এ সফল অভিযান প্রমাণ করে যে, অক্টোপাসরা সমুদ্রতলের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী।
গবেষকরা অক্টোপাসের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নানাভাবে গবেষণা করেছেন। তারা বলছেন, অক্টোপাসের আটটি আচরণ প্রমাণ করে, তারা পৃথিবীর বুদ্ধিমান প্রাণীদেরও একটি।
কানাডার লেথব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক মনস্তাত্ত্বিক জেনিফার মাথের ১৯৮৪ সালে বারমুডা ফিল্ডে একটি অক্টোপাসকে কিছু কাঁকড়া ধরে খাওয়া শেষে গর্তে ফিরতে দেখেন। হঠাৎ সে দুই মিটার দূরে থাকা একটি শিলাখণ্ড ধরে তার গর্তের দিকে নিয়ে গেলো। অক্টোপাসটি তিনবার একই কাজ করে তার বাড়ির সামনে একটি প্রাচীর তৈরি করলো। যখন সে তার নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট হলো, তখন শিলাপ্রাচীরের আড়ালে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
মাথের যুক্তি দেন যে, এটি এবং অন্য উদাহরণ প্রমাণ করে যে, অক্টোপাসরা দূরদর্শিতা ও কর্মের সমন্বয় এবং পরিকল্পনা করতে সক্ষম।
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত গবেষণায় মাথের প্রমাণ করেন, প্রবাল প্রাচীরের চেয়েও অক্টোপাস শিকারি হিসেবে বেশি বুদ্ধিমান এবং বিপুল খাদ্য সঞ্চয়ে সক্ষম। নানারকম জটিল ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশে অবিকল মাপের গর্ত তৈরি করে এর মধ্যে আশ্রয় নিতেও সক্ষম।
জেনিফার মাথেরের দুই সহকর্মী জীববিজ্ঞানী রোল্যান্ড অ্যান্ডারসন ও সার্জিও পেলিস সিয়াটেল অ্যাকুরিয়ামে অক্টোপাসের খেলা নিয়ে ১৯৯৯ সালে গবেষণা করেন। তারা জানান, অক্টোপাসরা বিভিন্ন পরিস্থিতি উত্তরণে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন উপায় আবিষ্কার করতে পারে।
২০০১ সালে এর ফলোআপ গবেষণায় বলা হয়, অক্টোপাসদের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তান-সন্ততির জিনেও ছড়ায়। তাদের ব্যক্তিত্ব অন্তত আংশিকভাবে জেনেটিক হয়।
২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন মিউজিয়ামের ভিক্টোরিয়া জুলিয়ান ফিন ও তার সহকর্মীদের গবেষণা প্রমাণ করে যে, অক্টোপাসরা নিজেদের ভবিষ্যত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে সক্ষম।
অক্টোপাশ যে ছদ্মবেশ ধারণে ওস্তাদ এটা সবারই জানা। নিজেদের আকৃতি, নড়াচড়া এবং আচরণকে অন্তত ১৫টি বিভিন্ন প্রজাতির শিকারের অনুরূপ পরিবর্তন করে শিকারগুলোকে কাছে আসতে প্রলুব্ধ করে এরা। বিবর্তনের ধারায় টিকে থাকতে এ ছদ্মবেশ তাদের মূল অস্ত্রও।
২০০৭ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে পেনসিলভানিয়ার মিলারসভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জঁ বোয়াল বলেছেন, অক্টোপাসরা যা চায়, তা পাওয়ার সেরা উপায় খুঁজে বের করতে শুদ্ধাশুদ্ধি জ্ঞান ব্যবহার করতে পারে। তারা সমস্যার সমাধান ও একটি লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন কৌশল নিতে সক্ষম।
২০০৭ সালে আবারও গবেষণা করে চমকপ্রদ তথ্য পান মাথের ও অ্যান্ডারসন। তারা এ সিদ্ধান্তে আসেন যে, অক্টোপাসদের জটিল মেমরি ক্ষমতা আছে। তারা যেসব জায়গা সম্প্রতি পরিদর্শন করেছে, সেগুলো সম্পর্কে এবং পরিচিত খাদ্য অবস্থানগুলোর তথ্য মনে করতে পারে। অন্য প্রাণীদের চেনার ক্ষেত্রেও এ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে।
স্তন্যপায়ী এ প্রাণীর মস্তিষ্ক অনেকটা মানুষের মতোই এবং একইভাবে স্মৃতি সংরক্ষণ করে থাকে। তাই তারা বলেন যে, মানুষ এবং অক্টোপাসদের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ দীর্ঘদিন আগে একসঙ্গে বাস করতো।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এএসআর/টিআই