ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

হারিয়ে যাচ্ছে বল্গা হরিণ

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
হারিয়ে যাচ্ছে বল্গা হরিণ

র ্যাংগফিার টেরান্ডাস্‌ বা বল্গা হরিণ বৃহত্তম হরিণ প্রজাতির একটি। উত্তর গোলার্ধের তুষারাবৃত ও শীতপ্রধান দেশগুলো এদের আবাসস্থল। অভিবাসিত মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সর্বত্র। প্রধানত তিনটি প্রজাতি ও অসংখ্য উপ-প্রজাতিতে বিভক্ত বল্গা হরিণেরা প্রাগৈতিহাসিক প্লিস্টোসিন যুগ থেকেই টিকে আছে।

র ্যাংগফিার টেরান্ডাস্‌ বা বল্গা হরিণ বৃহত্তম হরিণ প্রজাতির একটি। উত্তর গোলার্ধের তুষারাবৃত ও শীতপ্রধান দেশগুলো এদের আবাসস্থল।

অভিবাসিত মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সর্বত্র। প্রধানত তিনটি প্রজাতি ও অসংখ্য উপ-প্রজাতিতে বিভক্ত বল্গা হরিণেরা প্রাগৈতিহাসিক প্লিস্টোসিন যুগ থেকেই টিকে আছে।

তবে বর্তমানে দ্রুতগতিতে বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে এই হরিণেরা। এর কিছু উপ-প্রজাতি অত্যন্ত দুর্লভ এবং এক বা একাধিক উপ-প্রজাতি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উত্তর মেরুর অন্তর্গত উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলে এরা ক্যারিবো ও উত্তর ইউরোপ ও এশিয়ায় রেইনডিয়ার নামে পরিচিত।

কানাডার উত্তরাঞ্চলীয় কুইবেক প্রদেশের ল্যাব্রাডর, উত্তর হোলার্কটিক বা সাহতু অঞ্চলের অন‍ুর্বর ভূমি, পাহাড়ি এলাকা ও তৈগা বনভূমি এবং কুইবেকের তুন্দ্রা অঞ্চলের জর্জ নদীর অববাহিকা অনেক প্রজাতির বল্গা হরিণের প্রধান আবাসস্থল ছিল। আট থেকে নয় লাখ হরিণের মধ্যে এখন সেখানে রয়েছে ৭৪ হাজারেরও কম।

৯২ শতাংশ বল্গা হরিণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো, বর্তমানে তাদের ঐতিহাসিক বাসস্থানগুলোর অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে উষ্ণতায় বরফ গলার কারণে বাসস্থান হারাচ্ছে এরা। আর আকরিক লৌহখনি, জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রাস্তা, দালান-কোঠা নির্মাণের কারণে বিশেষ করে দক্ষিণাংশে এদের বিলুপ্তি ঘটেছে বেশি।

তুলনামূলকভাবে বড় শিংয়ের অধিকারী পুরুষ বল্গা হরিণের বিলুপ্তির হার বেশি। যেখানে স্ত্রী হরিণের অভাব রয়েছে সেখানে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

এদিকে, মানুষের নির্বিচার শিকার ও বন্দি করে রাখার কারণেও কমছে বল্গা হরিণেরা। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ক্যারিবো বা বন্য বল্গা হরিণ শিকার করছে। আটক হরিণকে গৃহপালিত কিংবা অর্ধ-গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত করার লক্ষ্যে পোষ মানানো হয়। এর কাছ থেকে মাংস, চামড়া, শিং, দুধ পাওয়া যায়। উত্তর গোলার্ধের অধিবাসীদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত বল্গা হরিণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কানাডার উইনিপেগ ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জাঁ পোলফাস ও তার সহকর্মী এবং প্রাণিবিজ্ঞানী লেওন অ্যান্ড্রু গবেষণা করে জানিয়েছেন, উৎপত্তিগতভাবে বল্গা হরিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, ইউরোপের উত্তরাঞ্চল, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং চীনের উত্তরাঞ্চলের ৫০তম অক্ষাংশে দেখা গিয়েছিল।

উত্তর আমেরিকার কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা এবং ওয়াশিংটন থেকে মেইন পর্যন্ত এরা বিচরণ করতো। ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত আইডাহো অঙ্গরাজ্যে দেখা যেতো। প্রাকৃতিকভাবে সাখালিন, গ্রীনল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে পাওয়া যেতো। প্লিস্টোসিন যুগে উত্তর আমেরিকার নেভাদার দক্ষিণে এবং টেনেসিতে ও ইউরোপের স্পেনে দেখা যেতো।

নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সাইবেরিয়া, গ্রিনল্যান্ড, আলাস্কা এবং কানাডায় বুনো বল্গা হরিণের প্রাচুর্য্য ছিল। কুইবেকের তুন্দ্রা অঞ্চলে জর্জ নদীর অববাহিকা এবং কানাডার উত্তরাঞ্চলীয় কুইবেক প্রদেশের ল্যাব্রাডরে হরিণ পালে পালে বসবাস করতো।

পোলফাস বলেন, কানাডার উত্তরের বনভূমির কারিবোকে বিভিন্ন অঞ্চল ও কেন্দ্রে হুমকির মুখে থাকা প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী পরিচালকদের তাদের রক্ষায় কাজ করা প্রয়োজন।

কানাডার সাহতু অঞ্চলের ডেন উপজাতির আদিবাসীরা কারিবো’র প্রজাতিগুলো হারিয়ে যাওয়ার জন্য বেশি দায়ী। তাই ২০১২ সাল থেকে সাহ্‌তুতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে কাজ করছে পাঁচটি নবায়নযোগ্য রিসোর্স কাউন্সিল (RRCs)। সাহতু পুনর্নবীকরণ রিসোর্স বোর্ডের উপদেষ্টা লেওন অ্যান্ড্রু’র সঙ্গে এ কাজে যোগ দিয়েছেন জাঁ পোলফাস ও তার সহকর্মীরা। তারা সম্মিলিতভাবে বল্গা হরিণ সংরক্ষণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এএসআর/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।