ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

কী সেই সুপার পাওয়ার?

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
কী সেই সুপার পাওয়ার?

কানাডার ইউকোনসহ আলাস্কা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলের কাকড়া বিছা’র একটি প্রজাতি বিস্ময়করভাবে চরম ঠাণ্ডা মোকাবেলার পাশাপাশি টানা ১৭ দিন বা ৪০৮ ঘণ্টা বাঁচতে পারে শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়াই।

কানাডার ইউকোনসহ আলাস্কা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলের কাকড়া বিছা’র একটি প্রজাতি বিস্ময়করভাবে চরম ঠাণ্ডা মোকাবেলার পাশাপাশি টানা ১৭ দিন বা ৪০৮ ঘণ্টা বাঁচতে পারে শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়াই।

সিউডোস্কোরপিয়ন নামক সর্বংসহা প্রাণীটিকে নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

চরম পরিবেশে প্রাণীটির টিকে থাকার কৌশল মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন, সংরক্ষণ ও মহাশূন্যে যাত্রাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

এদের প্রাকৃতিক ইতিহাস নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন কানাডার ম্যাগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল রিসোর্স সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খ্রিস্ট্রোফার এম. বাডল।

একবার প্রফেসর বাডল তার সহকর্মীদের নিয়ে কানাডার ইউকোন অঞ্চলে অন্য একটি গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে যান। ঘটনাক্রমে বহু বছর আগে কাগজে পড়া সুমেরু অঞ্চলের সিউডোস্কোরপিয়নদের কথা মনে পড়ে যায় তার।

সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থেমে যান তিনি। পুরো দল নিয়ে খাঁড়ির কাছে চলে যান। সেখানে গিয়ে পাথরের নিচে সিউডোস্কোরপিয়নদের খুঁজতে শুরু করেন। সেবার তারা মাত্র ৪টি নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।

কিভাবে এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো চরম পরিবেশে টিকে থাকে তা জানার জন্য ওয়েস্টার্ন অনটারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেন্ট সিক্লেইর ও সুসান অ্যান্থনিকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন বাডল।

দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বাডল টিম ২০০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করলেন এবং কিভাবে এরা তীব্র ঠাণ্ডা ও পানির নিচে ডুবে থাকে, তা নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন।

তারা প্রথমে খুঁজে পেলেন আর্থপোডা পর্বের অন্য অনেক প্রাণীর মতো সুমেরু অঞ্চলের সিউডোস্কোরপিয়ন্‌সরাও তাদের শরীর সংকোচন করে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় সুপার কুলিং। এ প্রক্রিয়ায় তারা মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও জমে যাওয়া ঠেকাতে পারে।

এ তথ্যটি চিত্তাকর্ষক, কিন্তু দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো ছিল না। কারণ, আন্টার্টিক স্প্রিঙ্গটেইলের মতো ঠাণ্ডা সহিষ্ণু অন্য কিছু প্রজাতি মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে।

তীব্র শীতে তাপমাত্রা যখন মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও কমে যায় তখন মেরু অঞ্চলের সিউডোক্সোরপিয়নরা স্নো লেয়ারে লুকিয়ে পড়াসহ ‍অন্য কৌশলগুলো কাজে লাগায়।

পানির নিচে কিভাবে এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো টিকে থাকে এর রহস্য বের করতে গিয়ে বের হয়ে আসে দুনিয়াকে তাক লাগানো খবর।

গবেষক দল তখন নর্দান সিউডোস্কোরপিয়নদের পানিতে ডুবিয়ে দেখতে চান, তারা কতোটা সময় ধরে টিকে থাকতে পারে? ১৭ দিন পর দেখা গেলো, অর্ধেকের মতো সিউডোস্কোরপিয়ন্সই জীবিত। এটি একটি অসাধারণ ও অনেক বড় আশ্চর্যের বিষয়, অলৌকিক।

পানির নিচ থেকে যখন বিষ্ময়কর ক্ষুদ্র প্রাণীগুলোকে পানির ওপরে আনা হয়, তখন তাদের সিলভার বা রূপালি রঙের দেখায়। তারা তাদের শরীরের চারপাশে একটি বায়ুর স্তর আটকে রাখে। কিন্তু এটিই পানির নিচে এতো সময় বেঁচে থাকার আসল রহস্য নয়।

কারণ, আর্থপোডা পর্বের অনেক প্রাণীই এটা করে। তবে বেশিরভাগ আর্থপোডা তাদের বিশেষ অঙ্গ ব্যবহার করে পানি থেকে অক্সিজেন নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারে। এটিকে প্লাসট্রন্স বলে। এ প্রক্রিয়ায় আর্থপোডা পর্বের কিছু প্রাণী কয়েক ঘণ্টা থেকে একাধিক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

কিন্তু উত্তর মেরুর সিউডোস্কোরপিয়নরা প্লাসট্রন প্রক্রিয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালায় না। তাহলে কি সেই সুপার পাওয়ার, যেটি এদের এতোটা সময় বাঁচিয়ে রাখে?

গবেষকরা পানি থেকে সব অক্সিজেন সরিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করলেন। কিন্তু সিউডোস্কোরপিয়নদের ওপর সেটি কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

পানির নিচে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে প্রাণীটির দীর্ঘ সময় টিকে থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি পরিষ্কার নয় যে, কিভাবে তারা এটি করে। কিন্তু সম্ভবত কোনো না কোনো উপায়ে তাদের শারিরীক ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। তারা পানির নিচে মেটাবলিকেলি সাট ডাউন করতে সক্ষম। যার ‍কারণে তারা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এটি বিষ্ময়কর, অলৌকিক।

মেটাবলিকেলি সাট ডাউনের বিষয়টি যদি সত্যি হয়, চরম পরিবেশে টিকে থাকা প্রাণীটি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে মানব অঙ্গ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন, মহাশূন্যে যাত্রাসহ তার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এমইউএম/এএসআর/টিআই

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।