ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

আজও অনুকরণীয় মেসোপটেমিয়া

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
আজও অনুকরণীয় মেসোপটেমিয়া

মেসোপটেমিয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার একটি, যেখানে আধুনিক সংস্কৃতির অনেক কিছুর উৎপত্তি। নিউইয়র্কের ফ্রেড এফ ফরাসি ভবন নির্মিত হয়েছে মেসোপটেমিয় আকাশস্পর্শী স্থাপত্যকলা, শিল্প ও নকশার অনুপ্রেরণায়।

মেসোপটেমিয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার একটি, যেখানে আধুনিক সংস্কৃতির অনেক কিছুর উৎপত্তি। নিউইয়র্কের ফ্রেড এফ ফরাসি ভবন নির্মিত হয়েছে মেসোপটেমিয় আকাশস্পর্শী স্থাপত্যকলা, শিল্প ও নকশার অনুপ্রেরণায়।

কাদা-ইঁটের জিগ্গুরাটস্‌ নামক এক ধরনের আয়তক্ষেত্রাকার টাওয়ার দেখা যায় সেখানকার প্রাচীন নগরগুলোতে (বিশেষত বাবিলে), যেগুলো মন্দিরের মতো সোপানযুক্ত। জিগ্গুরাটস্‌কে ৩য় সহস্র খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথম দেবি হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা সম্ভবত বাইবেলের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত।

দুঃখের বিষয় যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেসোপটেমিয় মিনার ও প্রাচীন স্থাপত্যের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করে ফেলেছে। তারপরও সেগুলোর অনুকরণে সভ্যতাটি ধ্বংসের পর থেকে আজ পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের স্থাপনা, নাটক-চলচ্চিত্র এমনকি ভিডিও গেমস্‌ পর্যন্ত। প্রত্নতত্ত্ববিদরা গবেষণা করে জেনেছেন, কুমোরের চাকাসহ কারিগরি উদ্ভাবন, গণিত, চিকিৎসা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিল এ সভ্যতা। আমরা এখন যে এক ঘণ্টায় ৬০ মিনিট ধরে সময় গণনা করি, সেটিও মেসোপটেমিয়ানদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এমনকি সোনার চালুনির মতো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বিয়ারের প্রথম উৎপাদন ছাড়াও দুগ্ধ ও বয়ন শিল্প বিকশিত হয়েছিল সেখানে।
ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে মেসোপটেমিয়ার ৫ হাজারেরও বেশি পুরাকীর্তি ও প্রত্নতত্ত্বের নির্দশন। মিউজিয়ামটির মধ্যপ্রাচ্যের পুরাকীর্তি বিভাগের কিউরেটর অ্যারিয়ান থমাস বলেন, ‘যদিও মেসোপটেমিয়ার শুষ্ক পৃথিবী সেচ দিয়ে খুব উর্বর বলে প্রমাণিত, তারপরও বাইরে থেকে এখানে অনেক কিছু আনতে হতো। কারণ, কিছু কাঠ, পাথর ও ধাতুসহ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের অভাব ছিল। এসব সম্পদ আমদানি করে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করেই ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিখ্যাত সুপ্রাচীন স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেন মেসোপটেমিয়ানরা। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সভ্যতার বাহ্যিক চিত্র সুদর্শন ও গতিশীল ছিল’।

যেমন ২২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি একটি তৈলস্ফটিক মূর্তি রয়েছে মিউজিয়ামে। একজন উপবিষ্ট কর্মকর্তা, একটি বিশদ মেষলোম স্কার্ট, দাড়ি পরা, চাঁচা মাথা ও অত্যাশ্চর্য নীল খচিত চোখের নীলকান্তমণিসহ আছে অনেক চটুল ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম ও শিল্পের মহৎ কাজও।

গত মাসে প্রকাশিত ‘প্রাচীন ইরান এবং মেসোপটেমিয়া: পর্বতমালা এবং নিচুভূমিসমূহের ব্যাখ্যা’ নামক নতুন বইয়ে অক্সফোর্ডের অ্যাসমোলিয়ান যাদুঘরের পল কলিন্স লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের মেসোপটেমিয়ার ধারণায় দ্রুত মত্ত হয়েছিল পশ্চিমা বিশ্ব। এর মানুষের চিত্রাবলী  রাজকীয় ক্ষমতা দিয়েই ইউরোপীয় কল্পনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়েছে’।

প্রাচীন গ্রিক ভাষায় মেসোপটেমিয়া শব্দের অর্থ ‘নদীর মধ্যবর্তী জমি’ বা উদ্ভাবন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে উম্মেষ ঘটা অতি উন্নত এ সভ্যতার গঠনকাল ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই। প্রাচীন ওই মানুষেরা ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর মধ্যবর্তী ফ্ল্যাট পাললিক অঞ্চল গঠনের পর থেকেই ‘সভ্যতার দোলনা’য় বেঁধেছিলেন। যেখানে প্রথম শিকারি পুরুষদের উদ্ভবের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত কৃষির ওপর ভিত্তি করে আরো বসতি স্থাপন করা হয়, যা সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে।


এদিকে প্রতিবেশী ইরানের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও প্রাচ্য-পাশ্চাত্তের সংযোগ স্থাপনে নদীর পাড় ঘেঁষে বা নদীর মাঝে নানাভাবে পথ তৈরি করা হয়। এ মডেল ইতিহাসের প্রথম সেতুর প্রতিনিধিত্ব করে, যা আজও দেখা যায়।

 বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬

এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।