হতদরিদ্র মানুষগুলোর খেলার সরঞ্জাম কেনার মতো সামর্থ্য নেই। দুর্গম ও সীমাবদ্ধ এসব এলাকায় নেই তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধাও।
এ চিত্র এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে ফিলিপাইনের গ্রামাঞ্চলজুড়ে। শহরেও খেলাটি জনপ্রিয়, তবে প্রত্যন্ত ও দুর্গম গ্রামগুলোতে ‘বাস্কেটবল ক্রেজ’ এখন রীতিমতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার রিচার্ড জেমস ড্যানিয়েলের তোলা বেশকিছু আলোকচিত্রে বাস্কেটবলের প্রতি ফিলিপিনোদের এ আবেগ ফুটে উঠেছে। গত ২৫ বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাস করছেন তিনি। ফিলিপাইনে আছেন প্রায় পাঁচ বছর।
ড্যানিয়েল বলেন, ‘এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ফুটবল যেখানে ব্যাপক জনপ্রিয়, সেখানে ফিলিপিনোদের ঝুড়ি- বাস্কেটবলের প্রতি আবেগ বিস্ময়কর। বিশেষ করে ভিসায়ন দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের তৃণমূল দরিদ্র গ্রামগুলোর কোর্টগুলো’।
গ্রামগুলো সাধারণত খুব দুর্গম এবং প্রায়ই সীমাবদ্ধ হয়। খুব কম সংখ্যক খেলোয়াড়েরই খেলার জুতা কেনার টাকা আছে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুরা ফ্লিপ ফ্লপ জাতীয় স্যান্ডেল পরে, আবর্জনা দিয়ে পা ঢেকে বা খালি পায়ে খেলতে নামে।
এ দেশের শহরের শরীরচর্চার স্থানগুলোর চেয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র মানুষের বানানো বাস্কেটবল কোর্ট ও ঝুড়ির নানন্দিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বেশ চমকপ্রদ বলেও জানান ড্যানিয়েল।
অভাবই ফিলিপিনোদের সৃজনশীল করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো প্রকৃত কোর্ট বানানোর সামর্থ্য তাদের নেই। ফাঁকা জায়গাকে কোর্ট হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাকবোর্ডসহ যে উপাদানই পাওয়া যায়, তাতে তৈরি করা হয় হুপস বা ঝুড়ি। ঝুড়িসহ ব্যাকবোর্ড সাধারণত গাছের ওপর স্থাপন করা হয়। এর ফলে গাছের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠতে থাকে ঝুড়ির অবস্থান’।
ড্যানিয়েল ছবি তোলার সময় গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বাড়ির পেছনে অথবা উঠোনে বা গ্রামীণ মাঠে একক হুপস দেখেছেন। তেমনি পেয়েছেন বাস্কেটবল খেলার জন্য অস্থায়ী ঘর ও কোর্টও। এ ধরনের তিন শতাধিক কোর্ট ও ঝুড়ির ছবি এ পর্যন্ত তুলে নথিভুক্ত করেছেন তিনি।
এক বছর ধরে তোলা এসব সিরিজ ছবি দিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছেন ড্যানিয়েল। ‘এসবের বাস্তব জাতিগত ঐতিহাসিক উপাদান রয়েছে। ফিলিপাইনের অন্যান্য অঞ্চলে আরও মজাদার নতুন নতুন ছবি পাবো বলে আশা করছি। স্থানীয় গ্রামবাসীরা অনেক ঝুড়ি-কোর্ট প্রতিস্থাপন করবেন আরো সমৃদ্ধিশালী করে’- বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
এএসআর